কবি হাসান আলীমের চমৎকার কাব্য রচনা `ফানাফিল্লাহ’
আবুল খায়ের নাইমুদ্দীন
সময়ের শ্রেষ্ঠ কবি, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী লেখক মেধাবী ও ব্যতিক্রমী লেখক কবি হাসান আলীম। তিনি প্রধান তিন ছন্দেই কবিতা রচনা করেছেন। বিশেষ করে আধুনিক কবিতা রচনায় তিনি বিজ্ঞ। “ফানাফিল্লাহ” তাঁর আধ্যাত্মিক কাব্য গ্রন্থ। তিনিই নতুন করে দু’পদের কবিতায় এ কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়াও তিনি সম্প্রতি কবি নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার উপর ব্যাপক মূলক গবেষণা গ্রন্থও রচনা করেছেন। ফানাফিল্লাহ” শব্দটিও ইলমে তাসাওউফের একটি পারিভাষিক আরবী শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ করলে হয়, আল্লাহর মাঝে বিলীন হয়ে যাওয়া”। শাব্দিক অর্থের দিকে তাকালে এতে শিরকের গন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু শব্দটা যারা ব্যবহার করেন তারা সেটিকে কোন দৃষ্টিতে করেছেন তা খতিয়ে দেখা হলে তখন আর এ গন্ধ পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে কলম ধরা কঠিন কাজ এটি একজন বুদ্ধিমান ও জ্ঞানীর মহৎ কাজ।
“ফানাফিল্লাহ” পারিভাষিক অর্থে আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে বিলীন করা। এটা ইলমে তাসাউফের অংশ। ওলামায়ে কেরাম “ফানাফিল্লাহ” বলতে বুঝান, ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ ও নববীর সুন্নাহ অনুস্বরণে, আল্লাহর এতটাই নিমগ্নতার সাথে ইবাদতে লিপ্ত হন যে, ব্যক্তির সব কিছুই আল্লাহর আদেশের অনুকুল হয়ে যায়। সে কথা বললেও আল্লাহর আদেশের উল্টো বলে না, সে খাওয়া খেলেও আল্লাহর আদেশের উল্টো করে না। তার কথা, কাজ, আচরণ, তার চুপ থাকা, তার পারিবারিক জীবন, ব্যক্তি জীবন, তার লেনদেন, তার সর্ব কাজেই আল্লাহকে রাজি খুশি করা যার মহান ব্রত হয়ে দাঁড়ায়। সে যেন আল্লাহর বিধান ও আনুগত্বের মাঝে নিজে লীন হয়ে যায়। তার নিজের কোন ইচ্ছে থাকে না। তাসাওউফের মেহনতের মাধ্যমে যে ব্যক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তাকে বলা হয়, সে “ফানাফিল্লাহ” এ পৌঁছে গেছে।
তাছাড়া তিনি আলোচ্য গ্রন্থে সাতটি মৌলিক বিষয়ে তিনি কবিতা রচনা করেছেন। বিষয়গুলো স্রষ্টাতত্ত্ব, নবিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব, কর্মতত্ত্ব, প্রেমতত্ত্ব।
বইটির নাম শোনার পর হতে ভাবছিলাম কবি হাসান আলীম ভাই একজন বাংলা পড়ুয়া মানুষ তিনি কিভাবে এ শব্দ পর্যন্ত গেলেন। অবশেষে নজরুল একাডেমির একটি মাসিক অনুষ্ঠানে বইটি হাতে পাই। তিনি আমায় গিফট করেন আর তখন থেকে এর ভিতরের শব্দ ও বাক্য গুলো লক্ষ্য করতে থাকি। আমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম তিনি কেমন বাক্য ব্যবহার করে কায়মনো বাক্যে নিজেকে বিলীন করলেন।
গ্রন্থের প্রথম পদেই তিনি আল্লাহর একাত্মবাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন- শূণ্য নন প্রভূ মোর কিংবা নিরাকার তাহার আকারে তিনি তাহার প্রকার। তৃতীয় পদে লিখেছেন, প্রভূর রঙের চেয়ে আর কে রঙিন তাহার রঙেই তুমি হওনা মোমিন”। এতে কোরআনে আয়াত মনে হয়ে যায়- সিবগাতাল্লাহি ওমান আহসানু মিনাল্লাহি সিবগাহ’ তোমরা আল্লাহর রঙে রঙিন হও। এ বাক্য গুলো তাঁকে আল্লাহর আনুগত্যের দিকেই ধাবিত করে। ৬ নং কবিতায় লিখেছেন তিনি একক এক মহাশক্তিধর, দয়ার সৃষ্টির প্রতি মায়ার সাগর”। এই বাক্যের পর আর কোনো অভিযোগ থাকে না। তিনি চেষ্টা করেছেন তাঁর জ্ঞানের পরিধি দিয়ে আল্লাহকে খুঁজতে। ১৬ নং স্তবকে লিখেছেন- যারে আমি খুঁজতেছি জনম জনম ধরে, সে নাকি লুকিয়ে আছে আমার আপন ঘরে। রূপতত্ত্ব অংশে লিখেছেন – চোখেতে চোখ পড়েছে তবু চোখ লাগে না, সে চোখে চোখ দিয়েছে তবু চোখ জাগে না। এখানে চোখের বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার দেখিয়েছেন। “সুন্দরী রমণী দেখে যদি দু’ঠোঁট ছোঁয়াও, আগুনে পোড়া লোহায় তাহলে চুম্বন দাও”।
সৃষ্টিতত্ত্বে ১১১ লিখেছেন- উড়ে গেলে রূহ পাখি মাটিতে শয়ন, দু’ চোখ ঘুমালে খোলে তৃতীয় নয়ন”। প্রভূ তোমায় ডাকলে পরে, কি কি নেবে সঙ্গে করে।” হাকিকত মারিফত আর তরিকত, নবির সিফাতে পাবে সব বরাকত। এভাবে তিনি বিভিন্ন পদে আল্লাহ ও রাসূলের সান্নিধ্য খুঁজেছেন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন ইনভেলাপ পাবলিকেশন্স, প্রচ্ছদ করেছেন মনিরুজ্জামান পলাশ। বইটিতে ২০২ টি কবিতা রয়েছে। বইটির মূল্য মাত্র ১৫০/ টাকা। আশা করি মজা পাবেন বইটি সবাই সংগ্রহ করতে পারেন।