আবছার উদ্দিন অলি (চট্টগ্রাম) : নায়রা, সায়রা, সারারা’তে মেতে উঠেছে চট্টগ্রামে ঈদের বাজার। সকাল থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলছে ঈদের কেনাকাটা। বাংলা নববর্ষ ও ঈদ একসাথে হওয়াতে মার্কেটগুলোতে বেচা বিক্রি জমজমাট হয়ে উঠেছে। মন্দা কাটিয়ে ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। সব মার্কেটেই ক্রেতাদের পদচারনায় মুখরিত। প্রত্যেকেই যার যার সাধ্যমতো কেনাকাটা করছেন। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ সব মার্কেট-এ ঈদ এর জামা কাপড়ের দাম বেশি। ঈদ উপলক্ষে সব মার্কেটে ভ্রাম্যমান আদালত ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন পরিষদ অভিযান পরিচালনা করলেও ক্রেতাদের ঠকানোর কাজটি খুব ভালোভাবে করছে।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ মার্কেটগুলোতে ডিসকাউন্টের নামে প্রতারণার নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ডিসকাউন্ট প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। নিউ মার্কেটে পাঞ্জাবী কিনতে আসা আবদুল্লাহ হারুন আল মিন্টু বলেন, ‘দেড় হাজার টাকার পাঞ্জাবী চার হাজার টাকার স্টিকার বসিয়ে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি করছে। এটা ঈদ বাজারে দোকানদারদের চুরি নয়, যেন ডাকাতি।’
চট্টগ্রাম নগরীর সবকটি মার্কেটের চিত্র এমনই। শাড়ী, শার্ট, পাঞ্জাবী, গেঞ্জি, জুতা, বাচ্চাদের জামা-কাপড়, কসমেটিক্স, এনমকি ইলেকট্রিক সামগ্রীও এই ডিসকাউন্টের মনলোভা অফারে ক্রেতাদের পকেট শূন্য করছে। অনেকে আবার এই ডিসকাউন্ট অফারে খুশী হয়ে নিজেরাই প্রতারিত হচ্ছেন। প্রতিটি পণ্যের উপরে মূল্যের একাধিক স্টিকার প্রমাণ করে, ডিসকাউন্ট প্রতারণার অভিনব কৌশল।
বিশ্ব বাজারে আমরা দেখতে পাই, উৎসব পার্বনে, বড় দিনে জিনিসপত্রের দ্রব্যমূল্যে সিংহভাগ বিশেষ ছাড়ে বিক্রি হয়। ফলে আমজনতা মধ্যরাতে শপিংমলে কাতার ধরে। অথচ পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্বকে দারুন নির্লজ্জভাবে পাস কাটিয়ে অনেক ব্যবসায়ীকে নানা ফাঁদ তৈরি করতে দেখা যায়। জীবনের এ কসুর হতে মাখলুকাতের মুক্তি কি মিলবে বাণিজ্যে! হয়তো কবিও সুন্দরের বন্দনা ফেলে রেখে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতিতে বিরক্ত হয়ে হয়তো এমন কবিতা লিখতেন- ‘যেন হাবাতের দেশে এসে প্রাণে মারা যাবো/ইফতার সেহেরী সেরে জীবনটাকে খাবো/কেবল বেড়েছে দাম মানুষের নয়/পণ্যের চেয়ে ইনসান কি দুর্মূল্য হয়!’
আমিন সেন্টারে থ্রি পিস কিনতে আসা শারমিন হোসেন বলেন, ‘ছয় হাজার টাকার থ্রি পিসে পনেরো হাজার টাকার স্টিকার লাগিয়ে ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। এ প্রতারণার শেষ কোথায়। সারা বছর যেন বসেছিল তারা এ সময়টার জন্য।
অভিযান চালানোর পরও কোন কিছুতেই থামছে না এ প্রতারণা। সানমার ওসান সিটিতে গেঞ্জি কিনতে আসা জাফর ইকবাল বলেন, ‘৫০০ টাকার গেঞ্জিতে স্টিকার লাগিয়েছেন তিন হাজার টাকার। আবার সে তিন হাজার টাকার ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিচ্ছেন। এটি যেন তুগলুগী কারবার।’
এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে নতুন টাকার চাহিদা থাকায় এখানে ও চলছে নানা প্রতারনা ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা করে কমিশন নিচ্ছে। ব্যাংকে গ্রাহকরা নতুন টাকা না পেলেও দালালরা ঠিকই নতুন টাকা নিউ মার্কেট থেকে কোর্ট বিল্ডিং পর্যন্ত পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছে।
প্রতিযোগিতা দিয়েই চলছে চট্টগ্রামের ঈদ বাজারে ডিসকাউন্ট প্রতারণা, অভিনব বটে। এ প্রতারণা চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত। আর এ আয়োজনের জন্য তারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। প্রয়োজনে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেবে, তবুও তারা ক্রেতাদের পকেট কাটবে। বেতন বোনাস পাওয়াতে আজ মার্কেট গুলোতে বেচা কেনা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।