তছলিম শিকদার, নোয়াখালীঃ নোয়াখালীতে ইউপি নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করার অভিযোগে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক
গতকাল নোয়াখালী দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক আরিফ আহম্মদ এ মামলা করেন। উল্লেখ্য যে, এ মামলা রুজুর বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুমোদন রয়েছে। তদন্তকালে ঘটনার সাথে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা ও অন্য কোন তথ্য প্রকাশ পেলে তাও আইনামলে আনা হবেএবং দুর্নীতি দমন কমিশন মামলাটি তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
দুদকের দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২২/৩/২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ৯নং বুড়িরচর ইউনিয়নের নির্বাচনে ২নং সংরক্ষিত মহিলা আসনের বুড়িরচর চারুবালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আবু সোলাইমান এবং উক্ত আসনের প্রার্থী শেফালী বেগম পরস্পর যোগসাজশে অবৈধভাবে একে অপরকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে প্রতারণা, জাল জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রার্থী শেফালী বেগমকে হেলিকপ্টার প্রতীকে প্রাপ্ত প্রকৃত ভোটের চেয়ে অধিক ভোট প্রাপ্ত দেখিয়ে বিজয়ী করায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উক্ত মামলার আসামিরা হলেন, হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আবু সোলাইমান ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী ও বুড়িরচর ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রব পাটোয়ারীর স্ত্রী শেফালী বেগম। তারা পরস্পর দ:বি: ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা মোতাবেক ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন।
এ ঘটনায় ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে অপর প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী নয়ন বেগম বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকার স্মারক নং-০০.০১.৭৫০০.৬২৪.০১.২৭২.২০/নো য়াখালী/২৪৮২২ তাং-০১/১১/২০২০খ্রি: এর বরাবর একটি দরখাস্ত করেন। সে দরখাস্ত দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, নোয়াখালীর স্মারকনং-দুদক/সজেকা/নোয়াখালী/ ২৫৯৯ তাং-১৭/১১/২০২০ খ্রি: এর নির্দেশে মহা-পরিচালক(তদন্ত-২) অনুবিভাগের ই/আর নং-তদন্ত-২/২৭২/২০২০/নোয়াখালী এর অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২২/৩/২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ৯নং বুড়িরচর ইউনিয়নেরনির্বাচনে উক্ত ইউনিয়নের ৪, ৫ ৬ নং ওয়ার্ডের সমন্বয়ে ২নং সংরক্ষিত মহিলা আসনে অত্র অভিযোগের অভিযোগকারী নয়ন বেগম সূর্যমুখী ফুল মার্কা, অভিযুক্ত শেফালী বেগম হেলিকপ্টার মার্কা এবং নাছিমা আক্তার বই মার্কায় প্রতিদ্বন্দীতা করেন। উক্ত নির্বাচনে ২নং সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্যবমোট পাঁটটি ভোট কেন্দ্র ছিল। যথা: রেহানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ছোট দেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, রেহানিয়া কাশেমুল উলুমমাদ্রাসা কেন্দ্র, বড়দেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং বুড়িরচর চারুবালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। বাদী নয়ন বেগম অভিযোগ করেন যে, উক্ত পাঁচটি কেন্দ্রের মধ্যে বুড়িরচর চারুবালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তার নির্বাচনী প্রতীক সূর্যমূখী ফুলে ভোট পড়ে ২৩১টি। তার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী শেফালী বেগমের হেলিকপ্টার প্রতীকে প্রকৃত ভোট পড়ে ৫০০টি। কিন্তু উক্ত কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো: আবু সোলাইমান এবং রিটার্নিং অফিসার মো: আনিছুর রহমান অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার প্রতিপক্ষ শেফালী বেগম এর হেলিকপ্টার মার্কায় প্রকৃত ৫০০টি ভোটের স্থলে ৫৫০টি ভোট পেয়েছে বলে ঘোষনা করে অভিযোগকারী নয়ন বেগমকে ৫ কেন্দ্রে মোট ১২ ভোটে পরাজিত দেখান। তার প্রেক্ষিতে অভিযোগের অভিযোগকারী নয়ন বেগম বিতর্কিত বুড়িরচর চারুবালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের ভোটপুনরায় গণনার জন্য বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, নোয়াখালীতে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল মামলা নং-০১/২০১৬ দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলার বিচার শেষে১৫/৫/২০১৭ খ্রি: তারিখে রায় প্রদান করেন। উক্ত রায় পর্যালোচনায় দেখা যায় যে,নঅভিযোগকারী নয়ন বেগম নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ৯নং বুড়িরচর ইউনিয়নের ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে প্রার্থী হিসেবে গত ২২/৩/২০১৬খ্রি: তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করেন। নয়ন বেগম সূর্যমূখী ফুল প্রতীক নিয়ে ৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে রেহানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে ৮৫৯ ভোট, ছোটদেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৭৪ ভোট, রেহানিয়া কাশেমুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৪৫৯ ভোট, বড়দেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৩৫ ভোট ও বুড়িরচর চারুবালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৩১ ভোট পেয়ে সর্বমোট ২২৫৮ টি ভোট প্রাপ্ত হন।
অন্যদিকে ১নং প্রতিপক্ষ শেফালী বেগম রেহানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২০৫ ভোট, ছোট দেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬৩৯ ভোট, রেহানিয়া কাশেমুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৫৪৬ ভোট, বড়দেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩৩০ ভোট ও বুড়িরচর চারুবালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫০০ ভোট পেয়ে সর্বমোট ২২২০টি ভোট প্রাপ্ত হন। চারুবালাসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১০৬৯টি ভোট কাস্ট হয়। তন্মধ্যে ১নং প্রতিপক্ষঅর্থাৎ মিসেস শেফালী বেগম ৫০০টি ভোট, ২নং প্রতিপক্ষ অর্থাৎ মিসেসনাছিমা আক্তার ১৮০টি ভোট এবং ১৫৩টি ভোট বাতিল হয় এবং ০৫ টি ভোটের ব্যালট পেপার পাওয়া যায়নি। যা নয়ন বেগম ও শেফালী বেগম এর এজেন্টদের সম্মুখে গণনার সময় ফরম ঞ-২ এ লিপিবদ্ধ করা হয়। পরে শেফালী বেগম প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারগণের উপর প্রভাব খাটিয়ে ফরম ঞ-২ এ তার হেলিকপ্টার প্রতীকে প্রাপ্ত মোট ৫০০ ভোট জাল জালিয়াতি করে ৫৫০ দেখান এবং বাতিল ১৫৩ ভোট জালিয়াতি ও অনিয়ম করে ১০৩ দেখান এবং প্রিজাইডিং অফিসার সংশোধনীর উপর কাউন্টার স্বাক্ষর করেন নাই। সর্বমোট ভোট কাস্ট হয়েছে ১০৬৯ টি এবং উক্ত ফরমে প্রতিদ্বন্দী কোন প্রার্থীর এজেন্টের স্বাক্ষর নেয়া হয় নাই। রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ফরম ঠ-১ এ নালিশী বুড়িরচর চারুবালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের অবৈধ ভোট সংখ্যা ১০৮টি দেখিয়ে প্রাপ্ত ভোট ঠিক রাখা হয়।
এদিকে সরেজমিনে দুদকের অনুসন্ধানকালে তর্কিত বুড়িরচর চারুবালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ভোট গণনা ঞ-২ ফরমের কয়েকটি কপি সংগ্রহ করা। তাতে দেখা যায় প্রত্যেকটি ফরমেই একই ধরনের জাল জালিয়াতি ও অনিয়ম পাওয়া যায়। এতে প্রমাণিত হয় যে, হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী শেফালী বেগম এর প্ররোচনায় বে-আইনী সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে পরস্পর যোগজসাজশে ঞ-২ ফরমে হেলিকপ্টার প্রতীকে প্রকৃত প্রাপ্ত ভোট ৫০০ এর স্থলে ৫৫০ করা এবং বাতিল ব্যালট পেপার এর ঘরে ১৫৩ এর স্থলে ১০৩ করার কাজটি উক্ত কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার মো: আবু সোলাইমান কর্তৃক করা হয়েছে। তাছাড়া উক্ত ভোট গণনার ফরমে অন্যান্য প্রার্থীর এজেন্টদের স্বাক্ষর গ্রহণের নিয়ম থাকলেও অসৎ উদ্দেশ্যে তিনি কোন এজেন্টের স্বাক্ষর নেননি। যা বিজ্ঞ আদালতের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল মামলায়ও প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে দরখাস্তের বাদী ও প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী নয়ন বেগম বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী শেফালী বেগম আমার কাছে নিশ্চিত পরাজিত হবে জেনে প্রিজাইডিং অফিসার মো: আবু সোলাইমানের সাথে অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে আমার বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। আমি তাদের এ অনিয়মের বিচার হোক।
অপরদিকে এবিষয়ে জাহাজমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু সোলায়মান জানান, আমি কোন অনিয়ম করিনি। এসব বিষয়ে তদন্ত চলাকালে আমি আমার জবাব দিয়েছি। ইউপি নির্বাচনে কোন জাল জালিয়াতি হয়নি।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।