মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে প্রশাসনের ভেঙে দেওয়া পাইপ জোড়া লাগিয়ে রাতে আধারে আবারও অবাধে কৃষি জমির মাটি কাটে অপর কৃষি জমি ভরাট করেছেন উপজেলার আড়িয়ল ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ইউপি সদস্য আকলেস সর্দার। বিগত প্রায় ২ মাস যাবৎ সে উপজেলার আপরকাঠি, ফজুশাঁ ও নিতিরা এলাকায় একাধিক মাটি কাটার ড্রেজার বসিয়ে অবাধে কৃষি জমি কর্তন ও ভরাট করে আসছে। ইতিমধ্যে ফজুশাঁ খালে বাঁশের বেড়া দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে খাল ভরাট করছেন এবং ফজুশাঁ বাজার সংলগ্ন রাস্তার উপরে স্পিড বেকার তৈরি করে পাশের অপর কৃষি জমি ভরাট করছেন। এনিয়ে গত ২২ অক্টোবর বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে আলমেস সর্দারের ড্রেজার পাইপ একাধিক স্থানে ভেঙ্গে দেয় টঙ্গিবাড়ী উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু ভেঙ্গে দেওয়া ড্রেজার পাইপ জোড়া দিয়ে ২৪ অক্টোবর রাত হতে সে পুনরায় ভরাট কাজ চালাচ্ছেন।
স্থানীয়দের সাংবাদিকরা মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে ভরাট স্থলে গেলে সাংবাদিকদের দেখে ড্রেজার মেশিন বন্ধ করে দিয়ে সটকে পরে আকলেসের ৪ ড্রেজার শ্রমিক। এর আগে সংবাদ প্রকাশের জেরে আকলেস সর্দার সাংবাদিকদের “আমি কিন্তু যাতে কাসাই সাংবাদিকদের দেখে নিবো বলে হুমকি প্রদান করে।”
জানা গেছে ইউপি সদস্য আকলেস সর্দার দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলার ফজুশাঁ বাজারে গরুর মাংস কেটে বিক্রি করে আসছে। বর্তমানেও ওই বাজারে তার গরুর মাংস কেটে বিক্রি করার ব্যবসা রয়েছে। বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত এই আকলেস সর্দার অর্থের জোড়ে গত ইউপি নির্বাচনে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। ইউপি সদস্য হওয়ার পরে বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি।
ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাদির হাওলাদার অসুস্থ হয়ে নিজ ঢাকার বাড়িতে অবস্থান করার সুযোগে তিনি একাধিক অবৈধ মাটি খনন যন্ত্র (ড্রেজার) তৈরি করে এবং ভাড়ায় এনে অবাধে ওই এলাকায় রমরমা মাটি কাটার ব্যবসা করছেন। এমনকি তার পাশের একাধিক ওয়ার্ড ইউপি সদস্যকে দিয়েও নিজে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এ মাটি কাটার ব্যাবসা করাচ্ছেন।
একদিকে প্রশাসনের ভেঙ্গে দেওয়া ড্রেজার পাইপ পুনরায় জোড়া দিয়ে কৃষি জমি হতে মাটি কাটা অন্যদিকে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া নিয়ে ওই এলাকায় বেশ চাঞ্চ্যলের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আকলেস সর্দার ইতিমধ্যে বসাউল্লাহ বিল হতে মাটি কেটে বসাউল্লাহ মসজিদের পিছনের বির্স্তিন কৃষি জমি ভরাট করছেন। বসাউল্লাহ মসজিদের পাশের খালের মধ্যে বেড়া দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে তার একটি ড্রেজার ওই স্থানে মাটি ভরাট করছে। অপর একটি ড্রেজার দিয়ে উপজেলার ফজুশা বাজারের পাশের সরকারি রাস্তার উপরে উঁচু স্পিড বেকার তৈরি করে পাশের অপর একটি কৃষি জমি ভরাট করছেন। এতে ওই পথে যাতায়াতকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাছাড়া পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে খাল ভরাট করায় বিস্তীর্ণ কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে আলু আবাদ বিঘ্নিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট চাষিরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অটো চালক শ্যামল বলেন, রাস্তার উপর উঁচু করে স্পিড বেকার দেওয়ায় স্পিড বেকারের উপর দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে ঝাঁকুনির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যাত্রীরা প্রায় গালমন্দ করছে। কিন্তু আমরাতো আর ইচ্ছা করে ঝাঁকুনি দিচ্চিনা উঁচু স্পিডবেকার একটু গতি বাড়িয়ে গাড়ি না উঠালে উঠতে চায়না। বেশি মালামাল ও যাত্রী নিয়ে আমরা আটো এই স্পিড বেকারের উপর দিয়ে তুলতে পারিনা। তাছাড়া মাঝে মধ্যে স্পিড বেকারের জন্য অটো কাত হয়ে পরে ঘটছে দুর্ঘটনাও।
এ ব্যাপারে ওই এলাকার বৃদ্ধ এসহাক মহলদার বলেন, কৃষি জমির মাটি কেটে নির্বিচারে আমাদের এলাকায় কৃষি জমি ভরাট করছে একলাস মেম্বার। সে ফজুশাহ গ্রামের খালও ভরাট করে ফেলছেন এতে ওই এলাকার বিলের পানি নামতে পারবেনা ফলে আলু চাষ করতে সমস্যায় পরতে হবে আমাদের ।
স্থাণীয়রা বলেন , আকলেস মেম্বারের রয়েছে একাধিক মাটি কাটার ড্রেজার। আড়িয়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাদির হাওলাদার অসুস্থ হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পরিষদের অনেক মেম্বাররা। আকলেসের বেপরোয়া মাটি কাটার বাণিজ্য দেখে অন্যান্য আরো কয়েকজন মেম্বার মাটি কাটার ড্রেজার তৈরি শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে আকলেস সর্দারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই সমস্ত ড্রেজার তার না বলে জানান। এ সময় আপনার না হলে আপনিতো ওই এলাকার ইউপি সদস্য ড্রেজারগুলো কার আপনার জানার কথা এমোন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ড্রেজারগুলো শ্রীনগর উপজেলার এক লোকের ওই লোকের নাম জানতে চাইলে তিনি ড্রেজারের মালিকের নাম জানেন না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে আড়িয়ল ভূমি অফিসের তহশিলদার আবু সালেক বলেন, বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন স্যারকে অবহিত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবো।
এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু.রাশেদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।