লাখোকণ্ঠ ডেস্ক: সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনো সংবাদ নিয়ে অভিযোগ থাকলে আগে প্রেস কাউন্সিলে যেতে হবে। তারাই ঠিক করবে আদৌ কোনো অপরাধ হয়েছে কি-না, বা অপরাধ হলে সেটি কোন আইনে বিচার হবে। শনিবার এডিটর্স গিল্ড আয়োজিত সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বিশিষ্টজনরা। তারা মনে করেন, দেশের স্বাধীনতা নিয়ে সাংবাদিকতার আড়ালে কেউ নেতিবাচক প্রশ্ন উত্থাপন করলে তার বিচার হওয়া উচিৎ।
শনিবার সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে ‘সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু। বৈঠকটি সরাসরি সম্প্রচার করছে বেসরকারি চ্যানেল একাত্তর টেলিভিশন।
বৈঠকে সম্প্রতি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে প্রথম আলোর সাংবাদিক আটকের ঘটনাটি প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তির দাবি তুলেন অনেক বিশিষ্টজন ও সচেতন নাগরিকরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, এসব বিষয়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণে প্রেস কাউন্সিল আইনের পরিবর্তন হওয়া দরকার। একইসঙ্গে এসব বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলের কাছে যথাযথভাবে আবেদনপত্র আসতে হবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হচ্ছে সেগুলো প্রথমে প্রেস কাউন্সিলে আসা উচিত। সেখানে যাচাই করে দেখা হবে, এটা অপরাধযোগ্য কিনা। তখন যে কোর্টের যে অফেন্স, প্রেস কাউন্সিল থেকে সেগুলো সেই কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর বাকিগুলো প্রেস কাউন্সিল বিচার করবে।
বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, বাস্তবিকভাবে সবাই মনে করছেন, বিদেশেও অনেকে বলছেন প্রেস কাউন্সিল কী করছে এই বিষয়গুলো দমন করতে। কিন্তু আসল কথা হলো আমাদের যে প্রেস কাউন্সিল, এটা আইনের ওপর চলে। যে আইনটার জন্ম হয়েছিলো ১৯৭৪ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু কর্তৃক। এই প্রেস কাউন্সিলে তখন একমাত্র প্রিন্ট মিডিয়া ছাড়া অন্য কোনও মিডিয়া ছিল না। যার ফলে আমাদের আইনে ওইটাই আছে যে প্রিন্ট মিডিয়ার ব্যাপারে এইটা ডিল করবে। যেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বর্তমানে, তাহলে অনান্য মিডিয়াগুলোও প্রেস কাউন্সিলের আন্ডারে আনা উচিত।
প্রেস কাউন্সিল আইন বদল করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছি মন্তব্য করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্যও দিচ্ছি এই আইন পরিবর্তনের জন্য। আশা করছি আইনটা চেঞ্জ হবে। কিন্তু এখনও হয়নি। চেঞ্জ না হলে তো যেই অবস্থায় ছিলো সেই অবস্থা! মানে আমাদের ক্ষমতা তিরস্কার করা পর্যন্ত। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা কিছু বলার আগে আমাদের কাছে আবেদন আসতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তরা আরও বলেন ডিজিটাল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কথায় কথায় সাংবাদিকদের ধরে আনা উচিত নয়। তারা বলেন সাংবাদিকতায় স্বাধীনতার যেমন প্রয়োজন তেমনি দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করাটাও অতি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের অর্জন এসব নিয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা হলে তারও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন গোলটেবিল আলোচনার বক্তরা।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বলা হয় বিরাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অপ তৎপরতা হয়েছে। সেই বিষয়ে সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য মত দেন সাংবাদিকতার সাথে জড়িত সম্পাদক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, সাবেক তথ্য কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের ইমেরিটাস সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, আর্টিকেল-১৯ এর পরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) ফারুক ফয়সাল।