বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত না হলে জুলাইয়ে দেশব্যাপী আমরণ অনশনের ঘোষণা ।
নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করাসহ সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে মশাল মিছিল করে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই মশাল মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড় হয়ে মৎস্য ভবন দিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে জাদুঘরের সামনে একটি সমাবেশের আয়োজন করে সংগঠনটি।
সমাবেশে বক্তারা নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন না করায় দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অবিলম্বে দাবিগুলো বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ কামনা করেন। আগামী জুনের মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়িত না হলে জুলায়ের মধ্যভাগ থেকে দেশব্যাপী আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন তারা।
সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. কিশোর রঞ্জন মণ্ডলের সঞ্চালনা ও সংগঠনটির সভাপতি ঊষাতন তালুকদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন সংগঠনটির অন্য দুই সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার, জাতীয় হিন্দু মহজোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায়সহ আরো অনেকে।
সভাপতির বক্তব্যে উষাতন তালুকদার বলেন, আমরা ধর্মীয় রাষ্ট্র চাই না। বরং ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার এই নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র চলবে এটি আমরা চাই। এই দেশকে আমরা আফগানিস্তান হতে দেবো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটিই দাবি নির্বাচনের সময়ে দেয়া ইশতেহারগুলো বাস্তবায়নে যেন তিনি অতিদ্রুত পদক্ষেপ নেন।
নির্মল রোজারিও বলেন, সরকার অনেকগুলো মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন এবং সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়নও করছেন। কিন্তু, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর একটিও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আপনি চাইলেই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কেননা, আমাদের বাদ দিয়ে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সংখ্যালঘুদের দাবি বাস্তবায়িত না হলে বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান কখনোই বাড়বে না।
ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার মশাল মিছিলের আগে আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। এসময় তিনি বলেন, বর্তমান সরকারি দলের ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো আগামী জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য সরকারি দল এবং শেখ হাসিনা যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
আমরা কোনোভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশে বঞ্চনা, বৈষম্য, নিগ্রহ, নিপীড়নের শিকার হতে চাই না। আমরা অপেক্ষা করবো প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় উদ্যোগের জন্য। আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকার ও দলের পক্ষ থেকে সক্রিয় উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হয়, তাহলে চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী জুলাইয়ের মধ্যভাগে ঢাকাসহ সারা দেশে আটটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচি গ্রহণে বাধ্য হবো।
দাবি আদায় না হওয়ায় গত ৬ জানুয়ারিতে সারাদেশ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রোড মার্চ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে এবং গত ৭ জানুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ৪০ হাজার ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নারী-পুরুষ জমায়েত হয়ে পদযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রী বরাবর উক্ত সাত দফা দাবি নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে।