Ad: ০১৭১১৯৫২৫২২
১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন আদালত
  3. আইন শৃংখলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি অর্থনীতি
  6. খেলাধূলা
  7. চাকরি-বাকরি
  8. জাতীয়
  9. জীবনের গল্প
  10. ধর্ম
  11. নির্বাচনী হাওয়া
  12. ফিচার
  13. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  14. বিনোদন
  15. রাজধানী
আজকের সর্বশেষ সবখবর

উত্তরা রাজউক কর্মকর্তাদের সমঝোতায় সরকারের ক্ষতি শতকোটি

বার্তা কক্ষ
মার্চ ২৮, ২০২৩ ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ইসমাইল হোসেন স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানী উত্তরা আবাসিক এলাকার ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডের ১০ কাঠা আয়তনের ৩১ নম্বর প্লটটি নিলামে প্রতিযোগিতামূলক দরে ৫০ কোটি টাকায় বিক্রি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সেখানকার একই আয়তনের ৪৫ নম্বর প্লটটি নিলামে একক দরদাতার কাছে ৩৫ কোটিতে বিক্রি করা হয়। একক দরে প্লট বিক্রি করায় রাজউকের লোকসান হয় ১৫ কোটি টাকা। শুধু একটি প্লটই নয়, রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১১টি বাণিজ্যিক প্লট একক দরে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।

তথ্য বলছে, গত বছরের অক্টোবর মাসে নিলামে ২৩টি প্লট বিক্রি করা হয়। তার মধ্যে ১২টি প্লট প্রতিযোগিতামূলক দরে প্রায় ৫৮৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকায় এবং ১১ প্লট একক দরে প্রায় ৪০৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। একক দরদাতার কাছে কম মূল্যে প্লট বিক্রি করায় সরকারের ১০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা।

রাজউক কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজউকের কোনো প্লট বা ফ্ল্যাট একক দরে বিক্রির বিধান নেই। কিন্তু রাজউকের একটি সিন্ডিকেট অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে প্রতিযোগিতামূলক দর ছাড়াই একক দরে ১১টি প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

রাজউকের নথিপত্রের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর উত্তরা এলাকার ৪ কাঠা আয়তনের ১টি, ১০ কাঠা আয়তনের ৯টি, ২০ কাঠার ১৩টিসহ মোট ২৩টি প্লট নিলামে বিক্রি করে রাজউক। এর মধ্যে ১০ কাঠা আয়তনের ৫টি এবং ২০ কাঠা আয়তনের ৬টিসহ মোট ১১টি প্লট বিক্রি করা হয় একক দরে। নিলামের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গত ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত রাজউকের ১৩/২০২২তম বোর্ডসভায় উপস্থাপন করা হয়। বোর্ডসভায় আলোচনা শেষে একক দরদাতাদের নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নথিপত্রের তথ্যমতে, ঢাকা মহানগরীর উত্তরা (১ম, ২য় ও ৩য় পর্ব) আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্লট নিলামে বিক্রির বিষয়টি রাজউকের ৩/২০২২তম বোর্ডসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর নিলাম কমিটির সভায় দরপত্র আহ্বান, তপশিল অনুমোদন ও দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর চারটি পত্রিকায় রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞার স্বাক্ষরিত নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উত্তরা ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁ জনপথ সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক এবং ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের মোট ৪৫টি প্লট নিলামে বিক্রির তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে মামলাজনিত কারণে ৩টি প্লটের নিলাম স্থগিত রাখা হয়। নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের ১০ ও ২০ কাঠা আয়তনের ৯টি প্লট, যার প্রতিটির কাঠাপ্রতি ভিত্তিমূল্য ৬ কোটি ও ২টির মূল্য ১ কোটি ২৫ লাখ করে ধার্য করা হয়। ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁ জনপথ সড়কের ১০ কাঠা আয়তনের ১৩টি প্লট, যার প্রতিটির কাঠাপ্রতি ভিত্তিমূল্য ধরা হয় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা করে, ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর অ্যাভিনিউ সড়কের ২০ কাঠা আয়তনের ২১টি প্লট, যার প্রতিটির কাঠাপ্রতি ভিত্তিমূল্য ধরা হয় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা করে।

নথিপত্রের তথ্যানুযায়ী, প্লট ক্রয়ের দরপত্র জমার শেষ তারিখ ছিল চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর। ওইদিন পর্যন্ত ১৮২টি দরপত্র বিক্রি হয়। নিলামে ২৩টি প্লট ক্রয়ের জন্য ৫৭টি দরপত্র জমা পড়ে। ২৫ অক্টোবর দরদাতাদের উপস্থিতি দরপত্র খোলার পর দেখা যায় ১২টি প্লট নিলামে ক্রয়ের জন্য ২ থেকে ৭টি পর্যন্ত দরপত্র জমা হলেও ১১টি প্লটের বিপরীতে মাত্র একটি করে দরপত্র জমা পড়ে। রাজউকের নিলাম কমিটি ওই ১১টি প্লট বিক্রির জন্য পুনরায় নিলাম দরপত্র আহ্বান না করে একক দরদাতার নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

নিলাম কমিটি একক দরে প্লট বিক্রির সুপারিশে বলা হয়, যেহেতু ৪টি পত্রিকায় সব প্লটের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। নিলামে বিক্রির দরপত্র ক্রয় ও দাখিলের আগে প্লট পরিদর্শন করে প্লটের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্ক অবগত ছিলেন মর্মে ধরা যায় এবং একক দাখিলকারী চাহিত ভিত্তিমূল্য থেকে কম মূল্য দাখিল করেননি, সমান ভিত্তিমূল্য দাখিল করা হয়েছে। তাই একক দর দাখিলকারীকে সম্পূর্ণ অর্থ প্রাপ্তি ও অন্যান্য বিধি-বিধানের সাপেক্ষে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা যেতে পারে। এরপর নিলামের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গত ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত রাজউকের ১৩/২০২২তম বোর্ডসভায় উপস্থাপন করা হয়। বোর্ডসভায় আলোচনা শেষে একক দরদাতাদের নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। এখন প্লট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিলাম কমিটির সদস্য সচিব ও রাজউকের পরিচালক (অ্যাস্টেট ও ভূমি-১) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, রাজউকের প্লট বিক্রির ক্ষেত্রে ওপেন টেন্ডার মেথড (ওটিএম) পদ্ধতির অবলম্বন করা হয়েছে। প্লটগুলো নিলামে বিক্রির বিষয়ে প্রচার-প্রচারণার কোনো কমতি ছিল না। মানুষ জানার পরও টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেনি। তাই একক দরদাতাকে প্লট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওটিএম পদ্ধতিতে একক দরদাতাকে প্লট দেওয়ায় কোনো বাধা ছিল না। নিলামের বিধি-বিধান মেনেই প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

রাজউকের একাধিক নিলাম কমিটির সদস্য ও সংস্থাটির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. এমদাদুল ইসলাম বলেন, রাজউকের কোনো প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে হলে দরপত্র আহ্বান করতে হবে। দরপত্রে সংশ্লিষ্ট প্লট বা ফ্ল্যাটের বিপরীতে শুধু একটি দরপত্র জমা পরলে সেক্ষেত্রে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করতে হবে। এভাবে ৫ বার দরপত্র আহ্বান করে যদি সংশ্লিষ্ট প্লট বা ফ্ল্যাটের বিপরীতে একটি দরপত্রই জমা পরে তাহলে সেটি একক দরদাতার কাছে প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রি করা যাবে। শুধু একবার দরপত্র আহ্বান করে একক দরে প্লট বিক্রি করার বিধান নেই। এটি অনিয়ম।

একই শর্তের কথা বলেছেন রাজউকের এস্টেট ও ভূমি শাখার একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, রাজউকের কোনো প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর যদি মাত্র একটি দরপত্র দাখিল হয়, তাহলে পুনরায় ৩ বার নিলামের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; কিন্তু রাজউক এবার যে নিলাম করেছে, তারা আগে গোপনে প্লটের ক্রেতা ঠিক করে দরও ঠিক করে বিক্রি করেছে। যেই ১১টি প্লট গোপন সমঝোতায় বিক্রি হয়েছে। এসব প্লটের দরপত্র দাখিলকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে। নিজেরা লাভবান হতে গিয়ে চক্রটি সরকারের প্রায় শতকোটি টাকার বেশি ক্ষতিসাধন করেছে। তাদের এ কাজ সরাসরি দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

রাজউকের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজউকের উত্তরা এলাকার বাণিজ্যিক প্লটের প্রতি কাঠার মূল্য ৪ থেকে ১০ কোটি টাকা। অথচ সেখানে রাজউক প্লট নিলামের ভিত্তিমূল্য ধার্য করেছিল ১ কোটি ২৫ লাখ থেকে ৬ কোটি টাকা, যা বাজারমূল্য থেকে অনেক কম। এর পরে আবার ১১টি প্লট রাজউক কর্মকর্তারা প্লট ক্রয়ে আগ্রহীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ভিত্তিমূল্যের কাছাকাছি দরে বিক্রি দিয়েছে। প্লটগুলো প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিক্রি হলে আরও বেশি মূল্য পাওয়া যেত।

তথ্য বলছে, উত্তরা এলাকার ২৩টি বাণিজ্যিক প্লট প্রায় ১ হাজার কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে ১২টি (১টির ৪ কাঠা, ৬টি ১০ কাঠা ও ৬টি ২০ কাঠা আয়তন) প্লট প্রতিযোগিতামূলক দরে বিক্রি হয় ৫৭২ কোটি ৫৪ লাখ ৪৪ হাজার ২০ টাকায়। আর ১১টি (৫টি ১০ কাঠা ও ৬টি ২০ কাঠা আয়তন) প্লট একক দরে ৪০৩ কোটি ৯৬ লাখ ৬৯ হাজার ২১০ টাকায় বিক্রি করা হয়। একক দরের প্লটগুলো গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে বিক্রি করেন রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তা। এতে সরকারের ১০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হলেও তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

নথিপত্রের তথ্যমতে, যেই ১১টি প্লটের বিপরীতে একটি করে দরপত্র জমা পড়েছে, সেগুলো রাজউকের ভিত্তিমূল্যের দরে বিক্রি করা হয়েছে। একক দরে বিক্রি করা ১১টি প্লটের মধ্যে ১৩ নম্বর সেক্টরের জনপথ সড়কের ১০ কাঠা আয়তনের ৪টি প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ২৭ নম্বর প্লটটি ৩৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় মোনালিসা সিরামিক কোম্পানি, ৪৫ নম্বর প্লটটি ৩৫ কোটি ৫০ লাখে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ৪৯ নম্বর প্লটটি ৪০ কোটি ৫ লাখ ১৩ হাজারে ইয়েস্টার জিন্স লিমিটেড এবং ৭৫ নম্বর প্লটটি ৩৫ কোটিতে এমএম অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর অ্যাভিনিউ সড়কের প্রতিকাঠা ভিত্তিমূল্য ধার্য ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেখানকার প্রতিটি প্লট ২০ কাঠা আয়তনের। এর মধ্যে ১ নম্বর প্লটটি একক দরদাতা হিসেবে ৪১ কোটি ৩০ লাখে ডেল্টা ফার্মা লিমিটেড, ১৩ নম্বর প্লটটি ৩৪ কোটি ২০ লাখে হেলথ কেয়ার ফরমুলেশন লিমিটেড । ১৮ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর অ্যাভিনিউ সড়কের ২ নম্বর প্লটটি ৩৭ কোটিতে টু বিল্ডার্স লিমিটেড, ১০ নম্বর প্লটটি ৩১ কোটিতে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ১৮ নম্বর প্লটটি ৩১ কোটিতে সেলিনা অ্যাপারেল লিমিটেড, ২০ নম্বর প্লটটি ৩১ কোটি ৫০ লাখে ইনডেক্স পোলট্রি (প্রা.) লিমিটেড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের প্রতি কাঠার ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ৬ কোাট টাকা। ওই সড়কের ১০ কাঠা আয়তনের ৯৫ নম্বর প্লটটি ৬২ কোটি ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ২১০ টাকায় মো. মজিবুর রহমানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়।



এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।