লাখোকণ্ঠ প্রতিবেদক:সাবেক সংসদ সদস্য, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালের নেতৃত্ব ১৫ টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে প্রগতিশীল ইসলামী জোট গঠিত হয়েছে। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রগতিশীল, ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর এই জোট।
শরিকদলগুলোর চেয়ারম্যানগণ জোটের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জোটের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি ও ৫ দফা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী তিন মাসে রাজপথনির্ভর কর্মসূচি দেবে জোট।
জোটের আত্মপ্রকাশকালে স্বাগত বক্তব্যে জোটের চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি দিনে-দিনে উদ্বেগজনক জায়গায় যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের অবারিত মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস জনগণের জীবন। হাসপাতালে-হাসপাতালে মৃত্যুর রোনাজারি। প্রশাসনে নানারকম অনিয়ম, দুর্নীতি।’

এম এ আউয়াল বলেন, ‘এসব অপতৎপরতা বন্ধ করে স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব সরকারের। একইভাবে সংবিধানসম্মত উপায়ে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আমরা অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের সকল প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানাই।’
তিনি উল্লেখ করেন, দেশের একটি জরুরি মুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে প্রগতিশীল, ইসলামী ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো সম্মিলিতভাবে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত রুখে দিতে প্রস্তুত। বিগত প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা অন্তত ২০ টি দলের সঙ্গে আলোচনা, বৈঠক করে অবশেষে ১৫ টি দলকে চূড়ান্ত করে একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারেরর অধীনে নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই ব্যবস্থা কিন্তু এখন সংবিধানে নেই। সংবিধানে যেই জিনিসটা নেই, সেটার অধীনে কীভাবে আবার নির্বাচন হবে সেটা আমার বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি দেশের সংবিধানের মালিক দেশের জনগণ। সংবিধানই মানুষকে প্রোটেকশন দিচ্ছে। এই সংবিধানের আলোকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে প্রগতিশীল ইসলামিক জোট অংশগ্রহণ করবে।’
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘নির্বাচন কখনও সরকারের অধীনে হয় না। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে আইন আছে সেটি যদি তারা যথাযথভাবে প্রয়োগ করেন তাহলে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকবে না, তারা তো স্বাধীন। সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, সেটা প্রয়োগ করলেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।’

লিখিত বক্তব্যে জোটের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতসহ কোনও- কোনও দল এই সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশের জনগণ সেই ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। বিশ্বে নির্বাচন বর্জন যেখানে বিরল– সেখানে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিকতাকে ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়ে নির্বাচন বর্জনের বক্তব্য গণতন্ত্রকে বিনষ্ট করারই নামান্তর।
জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষ স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করছে- একটি গণবিরোধী শক্তি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বমুখী পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতার ফায়দা লুটতে চায়। ইতোমধ্যে নানা বিদেশি রাষ্ট্র, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনের মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে- যার মধ্য দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নকে নতুন করে হাজির করেছে আমাদের সামনে।
জোটগঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানানো হয়, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের আহ্বানে বিগত দেড় বছর ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল ও ইসলামী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
জোটের অন্তর্ভূক্ত দলগুলো হচ্ছে, ১. ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি; ২। নেজামে ইসলাম বাংলাদেশ ; ৩। বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ ; ৪। বাংলাদেশ তরীকত ফ্রন্ট; ৫। বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি ৬। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগ; ৭। বাংলাদেশ জনমত পার্টি; ৮। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী জনতা দল (বি এন জে পি) ৯। ইসলামী লিবারেল পার্টি ; ১০। জনতার কথা বলে । ১১। বাংলাদেশ স্বাধীন পার্টি; ১২। বাংলাদেশ গণতন্ত্র মানবিক পার্টি; ১৩। সাধারণ ঐক্য আন্দোলন; ১৪। বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ ও ১৫। বাংলাদেশ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক ফোরাম।
এম এ আউয়ালকে চেয়ারম্যান করে জোটের কো-চেয়ারম্যানগণ হলেন ১। আজহাজ্ব হা: মাও হারিছুল হক ২। সৈয়দ সামসুল আলম হাসু ৩। মুফতি মাহাদী হাসান বুলবুল ৪। প্রফেসর কাজী মহিউদ্দিন সৌরভ ৫। খন্দকার এনামুল নাছির ৬। সুলতান জিসান উদ্দিন প্রধান ৭। ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী ৮। মাওলানা আতাউর রহমান আতিকি ৯। মো: নাঈম হাসান ১০। ডা. মোহাম্মদ সম্রাট জুয়েল ১১। মো: আখতার হোসেন ১২। হাবিব উদ্দিন আহম্মেদ ১৩। মো: আনোয়ার হোসেন ১৪। অধ্যক্ষ মো রফিকুল ইসলাম।
প্রগতিশীল ইসলামী জোটের ১০ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং সরকারের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন নির্বাচন কমিশন; বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা নিশ্চিত; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী সকল অপচেষ্টা কঠোর ভাবে দমন করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান করতে হবে। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ;
হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারীর অবৈধভাবে বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে এবং এসব অবৈধ কর্মকান্ডে তাদের সহযোগিতা কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করতে হবে এবং পাচারকৃত এসব অর্থ দেশে ফেরত আনা; অবিলম্বে খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি রোধ করে তা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা; স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক দুর্নীতি ও অব্যবস্থায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় চলমান অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করে আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা; বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি বন্ধ করে মূল্য মানুষের সহনীয় পর্যায়ে আনা; দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; সার, বীজসহ যাবতীয় কৃষি উপকরণের মূল্য কমিয়ে কৃষক যাতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে সে ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে এবং কৃষকের উৎপন্ন খাদ্য সামগ্রীসহ সকল কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য যাতে কৃষক পায় তা নিশ্চিত করা।

প্রগতিশীল ইসলামী জোটের পাঁচ দফা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে। সন্ত্রাসী, দুর্নীতি, ব্যাংক লুটেরা ও দেশের অর্থ অবৈধ ভাবে বিদেশে পাচারকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা, খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমানো; স্বাধীন ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের’ শর্ত সমূহ শিথিল করে এবং নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত আরোপ রহিত করে সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা; রাজনৈতিক হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলাসমূহ প্রত্যাহার করে নির্দোষ সকল দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও আলেম ওলামাগণের কারা মুক্তির জন্য কর্মসূচি দেবে প্রগতিশীল ইসলামী জোট।