চট্টগ্রাম ব্যুরো: একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে বারবার পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে সিএমপি’র চান্দগাঁও থানা৷ গত ৩ অক্টোবর চান্দগাঁও থানায় পুলিশ হেফাজতে দুদকের সাবেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুকে ঘিরে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ১৬ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে নিজ থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামী হয়েছেন ওসি খায়রুল ইসলামসহ চার পুলিশ কর্মকর্তা। পরিদর্শক তদন্ত মণিবুর রহমানকে সেদিন রাতেই বদলি করা হয়। এর আগে অভিযুক্ত অপর দুই সহকারী উপ-পরিদর্শককেও প্রত্যাহার করা হয়েছিল। মামলার আদেশের পর ওসি খায়রুল ইসলাম ছুটিতে চলে যান। এই ঘটনার পর থেকে ভেঙে পড়েছে চান্দগাঁও থানার চেইন অব কমান্ড। স্থবির হয়ে আছে নিয়মিত কার্যক্রম। সেবাপ্রার্থীরা থানায় গেলেও আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না।
গত ৮ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব চালায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত আজাদ। এতে অন্তত দশজন রক্তাক্ত যখম হয়। আহতরা সবাই অটো চালক, ফুটপাতের ভাসমান দোকানী। চাঁদা আদায়ে আজাদ বাহিনীর এহেন নৃশংস হামলা নিত্যকার ঘটনা। এ ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এজাহার জমা দেয়া হলেও নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, মামলা ও গ্রেপ্তার এড়াতে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল মোনাফের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন হয়েছে হামলাকারীদের। প্রধান অভিযুক্ত আজাদের সঙ্গে পুরনো সখ্যতা রয়েছে উপ-পরিদর্শক মোনাফের। ১৮ অক্টোবর রাত পর্যন্ত ভুক্তভোগীরা সকাল-বিকাল থানা পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ালেও মামলা রেকর্ড করেনি পুলিশ।
গত ১৬ অক্টোবর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা বি-ব্লক ১১ নম্বর সড়কে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং কর্তৃক দুই শিক্ষার্থীর উপর বর্বর হামলা চালানো হয়। লাঠিসোঁটা, লোহার রড দিয়ে প্রথমে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ ঘটনা সিসি টিভি ক্যামেরায় ধারণ হয়। ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় কিশোর গ্যাং লিডার আলভীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে এজাহার জমা দেয়া হয় চান্দগাঁও থানায়। প্রধান অভিযুক্ত গ্যাং লিডার আলভী বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ খানের আপন ভাগিনা। এলাকায় রীতিমতো সংঘাত সংঘর্ষ, হামলা-ভাংচুর, ছিনতাইসহ আলভী গ্যাংয়ের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
১৮ অক্টোবর রাতে চান্দগাঁও থানায় ডেকে নিয়ে ভিকটিম ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চান্দগাঁও পুলিশ। মামলার পরিবর্তে জোরপূর্বক আপোষ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এতে তৎপর ছিলেন নয়া চার্জ নেয়া পরিদর্শক তদন্ত ছবেদ আলী এবং অফিসার অপারেশন শামীম। পুলিশের এহেন কর্মকাণ্ড যেন কিশোর গ্যাংকে উৎসাহ যোগাচ্ছে।
“নগদ ষাট (৬০) লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে ওসি’র চেয়ারে বসেছি’- এহেন বেফাঁস মন্তব্য করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন চান্দগাঁও থানার ওসি খায়রুল ইসলাম। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় আরো দিগুণ উৎসাহে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ান চান্দগাঁও ওসি। অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরাও লাগামহীন হয়ে ওঠে। এতে করে ক্ষুন্ন হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি।”
চান্দগাঁও থানা পুলিশ কর্তৃক সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নানা উপায়ে হয়রানি করা হচ্ছে। চলতি বছরের ১৪মে পারিবারিক বিরোধের কারণে মোহরা ওয়ার্ড এ-ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা রেকর্ড করেন। বিনিময়ে পুলিশের পকেটে যায় নগদ দুই লক্ষ টাকা। ২০ এপ্রিল পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড এ-ইউনিট আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী রেজাকে বাড়ই পাড়াস্থ তার নিজ বাসভবন থেকে টেনে হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে ওসি’র নির্দেশে থানা হেফাজতে আলীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। পরে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির হস্তক্ষেপে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
২৯ এপ্রিল পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড সি-ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান মুরাদ জকু-কে বিনাদোষে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে একটি মিথ্যা মামলায় আটক দেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠে চান্দগাঁও পুলিশ। খবর পেয়ে থানা ঘেরাও করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। পরে বাধ্য হয়ে গভীর রাতে সেই আওয়ামী লীগ নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ৮ এপ্রিল উত্তর চান্দগাঁও এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংখ্যালঘু এক পরিবারের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। থানায় আনার পর জানা যায়, জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় রনি চন্দ্রনাথ নামে এক ব্যক্তির দায়ের করা মিথ্যা মামলায় তাদের আটক করা হয়েছে। তবে, নগদ ত্রিশ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে সকালে দুই আসামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অথচ, পুলিশের উপর হামলা করেও নির্বিঘ্নে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে চান্দগাঁও থানা এলাকায় চলছে নানা বেআইনি কার্যকলাপ। একাধিক আবাসিক হোটেল কেন্দ্রিক চলছে পতিতাবৃত্তি। এমনকি, গরীব অসহায় মেয়েদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে শহরে এনে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে এসব আবাসিক হোটেল গুলোর বিরুদ্ধে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বহদ্দারহাট নিরিবিলি আবাসিক হোটেল, গুলজার আবাসিক হোটেল, হোটেল নাদিয়া, চান্দগাঁও থানার সামনে হোটেল টাইম ইন ও চান্দগাঁও রেস্ট হাউজ, বাস টার্মিনাল এলাকার হোটেল রিগ্যাল প্যালেস অন্যতম।
বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার কেন্দ্রিক প্রকাশ্যে রাতে দিনে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রির হিড়িক পড়ে। এই স্পট পরিচালনার নেপথ্যে রয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী জুয়েল, তুহিন ওরফে তুফান, তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি তানভীর আহমেদ তুষার ও ইদ্রিস। পূর্ব ষোলশহর এলাকারপ বাড়ই পাড়ার হোসেন কলোনি ও লেদু কলোনি ঘিরে দীর্ঘদিন মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র। পরিচালনা করছে তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি সাদিয়া বেগম, মোহাম্মদ টিপু ও মোহাম্মদ শাকিল। এরা প্রত্যেকে অসংখ্য মামলার আসামী এবং পুরো পরিবারের নারী পুরুষ ও শিশুরাও মাদক বিক্রিতে সক্রিয়।
নগরীর সবচেয়ে বেশি জুয়ার আখড়া গড়ে উঠেছে চান্দগাঁও এলাকায়। এখানকার পাড়া মহল্লায় নিয়মিত বসে ছোট-বড় অসংখ্য জুয়ার আসর। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- খাজা রোড পাক্কা দোকান এলাকায় মহসিন ও খোকনের জুয়ার আসর, ইলিয়াস ব্রাদার্স বাড়ি সংলগ্ন কুত্তা বাগানের ভেতর, বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক খুইল্যা মিয়ার বিল্ডিংয়ের ২য় ও ৩য় তলার দু’টি রুমে জাহাঙ্গীরের আসর, তার পাশেই বাস টার্মিনাল রাংগুনীয়া বাস কাউন্টারের পাশে বসে রমজানের আসর, বাড়ই পাড়া এবং চেয়ারম্যান ঘাটা সালাউদ্দিনের বিল্ডিংয়ে জুয়ার আসর চলছে।
চান্দগাঁও থানা পুলিশের নামে বিভিন্ন খাত থেকে মাসোহারা আদায় ও চাঁদাবাজিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে- উপ-পরিদর্শক শরীফ উদ্দীন ও সহকারী উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক। এছাড়া, নানা অপকর্মে জড়িয়ে বিতর্কিত আরো একঝাঁক পুলিশ সদস্য। এরা হলেন- বহদ্দারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লুৎফুল রহমান সোহেল, কাপ্তাই রাস্তার মাথা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল মোনাফ, কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হৃদয় মাহমুদ লিটন, উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন, সুমন বড়ুয়া শাপলা, আজিজুল হক এবং কনস্টেবল আজিজ অন্যতম।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।