বিএনপি নেত্রী খালেদা রাজনীতি করতে পারবেন কি পারবেন না তা নিয়ে বিভ্রান্ত বিএনপি নেতারা। তারা মনে করেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই এমন ইস্যু সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলছেন না তারা।
গত কয়েক দিনে সরকারের অন্তত চারজন মন্ত্রী বিএনপি নেত্রীর রাজনীতি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের বক্তব্য এক রকম, অন্য দুজনের বক্তব্য ভিন্ন।
মন্ত্রীদের ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরাই স্ববিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। মন্ত্রীদের কথায়ই বোঝা যায়, মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে সরকার।’
কেউ কেউ বলছেন সরকার আলোচনার পথ সুগম করতে হঠাৎ চেয়ারপার্সনের রাজনীতি নিয়ে কথা তুলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আমি মনে করি না। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে কোন আলোচনাও হয়নি।
খন্দকার মোশারফ বলেন, আমাদের নেত্রীকে তো বন্দী করে রাখা হয়েছে, তাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। আমাদের লক্ষ্য তার মুক্তি এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। নানা বাধা সত্ত্বেও আমাদের এ আন্দোলনে জনগণ স্বতঃর্স্ফূত অংশ নিচ্ছেন। এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই এমন আলোচনা তৈরি করছে সরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। আপাতত এর বাইরে কোন তথ্য আমার কাছে নেই।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সংবাদকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সমস্যা, আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ও আমাদের চলমান আন্দোলন- এসব কারণে সরকার নমনীয় হতে বাধ্য হচ্ছে কি না সেটি দেখার বিষয় আছে। তাছাড়া সরকার হঠাৎ এই আলোচনা তৈরি করার বিষয়টি পরিষ্কারও নয়।’
তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় আমাদের চেয়ারপার্সনকে সাজা দেয়া হয়েছে। জামিন পাওয়ার যোগ্যতা থাকার পরও ওনাকে দেয়া হয়নি। আর আমরা দেখতে পাচ্ছি ক্যাসিনো স¤্রাটরা জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ বিদেশ ভ্রমণও করছেন। সাবেক এক সেনাপ্রধানের ভাইয়ের মৃত্যুদ- মাফ করে দিয়েছে, সে বিদেশ যাওয়ার পর সেই খবর আমরা জানতে পেরেছি। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তারা জামিন দেয়নি। তাকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারেননি। আর এখন তার রাজনীতি করার সুযোগ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।’
এদিকে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রীদের বিভিন্নমুখী বক্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া কারামুক্ত নন, সরকার শুধু শর্ত সাপেক্ষে তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছে। আর তিনি ‘গুরুতর অসুস্থ’ এবং ‘সে কারণে’ তিনি রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে রয়েছেন।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে গত কয়েক দিন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যের পরপ্রেক্ষিতে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
মন্ত্রীদের বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলছেন বিএনপি মহাসচিব। একটি গণমাধ্যমকে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘খালেদা জিয়া কার্যত কারাবন্দী। সরকার কৌশল করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার কথা বলে এলেও তার মামলা প্রত্যাহার হয়নি,সাজাও বাতিল করা হয়নি।’
মির্জা ফখরুলের বক্তব্য
সরকার খালেদা জিয়াকে সাজা থেকে রেহাই দেয়নি। শুধু শর্ত সাপেক্ষে তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছে। ফলে তিনি কারামুক্ত নন। যে কারণে বিএনপির চলমান আন্দোলনে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলছেন খালেদা জিয়া অসুস্থ না হলে কারাগারে থাকতেন, তাই তার রাজনীতি করার সুযোগ নেই। একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ,যিনি ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে ‘পারবেন না’,এমন কথা তার মুক্তির শর্তে বলা নেই। কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকও বলেছেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে ‘কোনো বাধা নেই’।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা যখন স্ববিরোধী কথা বলছেন, তখন প্রমাণ হয় যে অনির্বাচিত এই সরকার দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহির অভাব থেকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে নানা অযৌক্তিক কথা বলছেন।