প্রিয় বন্ধু! । আপনার মনে কি কখনো প্রশ্ন এসেছে যে, আল্লহর নৈকট্য হাসিলের উপায় কী, কেমন করে আল্লহর সাথে সম্পর্কোন্নয়ন সম্ভব এবং এর বাস্তব আমল কী-এ বিষয়টি। চলুন একটু গভীরে যাই-
আল্লহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের একটি মাত্র উপায় রয়েছে, তা এই যে, আপনি সর্বান্তকরণে এক লা-শারীক আল্লহ তা‘আলাকে নিজের এবং সমগ্র জগতের একমাত্র মালিক, উপাস্য এবং শাসকরূপে স্বীকার করুন। প্রভুত্বের যাবতীয় গুণাবলি, অধিকার ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লহ তা‘আলার জন্যই নির্দিষ্ট বলে গ্রহণ করুন। নিজের মন-মস্তিষ্ককে শির্কের যাবতীয় কলুষ-কালিমা হতে মুক্ত এবং অন্তরকে নির্মল ও পবিত্র রাখুন।
আল্লহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির দু’টি উপায় বেশি কাজে আসতে পারে।
চিন্তা ও গবেষণা দ্বারা এবং ২. বাস্তব কাজ বা আমলের দ্বারা।
চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে আল্লহ তা‘আলার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যম হলো পবিত্র কুরআনুল হাকীম সহীহ করে মনোযোগ সহকারে অর্থসহ অধ্যয়ন এবং সহীহ হাদীস নিয়মিত অধ্যয়ন করা । কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে নিজের চরিত্র ও কর্মকে গড়ে তোলা, কোনো অন্যায় নিজের ভেতরে থাকলে তা থেকে ইসলাহ (সংশোধিত) হওয়া। তাছাড়া আল্লহর হুকুম পরিপালনেরর ব্যাপারে আপনি কতটুকু ত্রুটি করছেন তা নির্ণয় করে যাচাই করে দেখা। এভাবে একটি সমীক্ষা নিয়মিত জারি রাখলেই আল্লহর সাথে সম্পর্ক বাড়বে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আল্লহ তা‘আলার সাথে আপনার একটি সম্পর্ক হলো যে, তিনি আপনার মা’বুদ এবং আপনি তাঁর গোলাম।
দ্বিতীয় সম্পর্ক হলো, পৃথিবীর বুকে আপনি তাঁর প্রতিনিধি (জবঢ়বৎংবহঃধঃরাব), আর তিনি অসংখ্য জিনিস আপনার কাছে আমানত রেখেছেন।
তৃতীয় সম্পর্ক হলো ঈমান। আপনি ঈমান এনে তাঁর সাথে একটি বিনিময় চুক্তি সম্পাদন করেছেন। সে অনুসারে আপনার জান ও মাল তাঁর নিকট বিক্রি করে দিয়েছেন এবং তিনি জান্নাতের বিনিময়ে তা খরিদ করে নিয়েছেন।চতুর্থ সম্পর্ক এই যে, আপনাকে তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে হবে, এবং তিনি শুধু আপনার প্রকাশ্য বিষয়সমূহের প্রতি লক্ষ রেখেই হিসাব গ্রহণ করবেন না বরং আপনার প্রত্যেকটি কাজ, আপনার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁর নিকট সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণ রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে হিসাব গ্রহণ করবেন।
অতএব আল্লহ তা‘আলা যেসব কাজ নিষিদ্ধ করেছেন, গোপনে ও প্রকাশ্যে যেকোনো অবস্থায় তা আন্তরিক ঘৃণার সাথে বর্জন করতে হবে। দুনিয়ার কোনো লাভ-ক্ষতির হিসাব করা যাবে না বরং আল্লহর গজব বা শাস্তির ভয়কেই বিশেষভাবে সক্রিয় রাখতে হবে। আবার নেক কাজগুলোও নিষ্ঠার সাথে মনের আগ্রহ নিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে শুকরিয়াও আদায় করতে হবে। তাহলেই ঈমানের স্বাদ অনুভূত হওয়া সম্ভব। আর ইসলামের কাজে আপনার নিজের জান-মাল, শ্রম এবং মন-মগজের শক্তি-সামর্থ্য কুরবানীর ব্যাপারে কোনো প্রকার কার্পণ্য করবেন না। আর এ কাজ সমাধা করে মনে বিন্দুমাত্র গর্ব অনুভব করা উচিত নয়।
আল্লহর নৈকট্য হাসিলের উপকরণ
মনে রাখবেন নিজেকে দ্বীনের উপর মজবুত রাখার কাজটি মোটেও সহজসাধ্য নয়। এটা কঠিন লক্ষ্যস্থল, এ পর্যন্ত পৌঁছতে হলে বিশেষ শক্তি-সামর্থ্যরে প্রয়োজন। আর আল্লহই দয়া করে বান্দাহকে এ পথে থাকার ও শক্তি অর্জনের রাস্তা দেখিয়েছেন কয়েকটি পন্থার মাধ্যমে। যেমন-
১. সালাত
শুধু ফরয সালাতই নয় বরং সাধ্যমতো নফল সালাতও আদায় করা। তবে নফল সালাত অত্যন্ত গোপনে আদায় করতে হবে, যেন আল্লহর সাথে আপনার সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় এবং আপনার মধ্যে নিষ্ঠার ভাব জাগ্রত হয়। আর এতে অন্তরে কোনো রিয়া থাকতে পারবে না। নফল সাদাকা ও যিকির-আযকার এমন হবে না-যা প্রচারের পর্যায়ে হয়ে যায়। তাহলে তা নেকের বদলে গুনাহেরই জন্ম দিবে।
২. আল্লহর যিকির
জীবনের সকল অবস্থাতেই আল্লহ তা‘আলার যিকির করা উচিত। কিন্তু তথাকথিত বিভিন্ন সুফী সম্প্রদায় এর জন্য যেসব পদ্ধতি-প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন কিংবা অন্যের নিকট হতে গ্রহণ করেছেন তা মোটেই অনুসরণযোগ্য নয়। বরং এ সম্পর্কে রসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পন্থা অনুসরণ করেছেন ও সাহাবায়ে কিরামকে শিক্ষা দিয়েছেন তা-ই হচ্ছে উত্তম ও সঠিক তরীকা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো যিকিরের মধ্যে যতখানি সম্ভব মুখস্থ করে নিবেন এবং শব্দ ও অর্থ উত্তমরূপে বুঝে নিবেন। এতে মনে গভীর দাগ কাটবে।
৩. সওম বা রোযা
শুধু ফরয নয় বরং নফল রোযা পালন করাও প্রয়োজন। প্রতি আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে এ তিন দিন রোযা পালন খুবই উত্তম আমল। তাকওয়া অর্জনের জন্য এটা খুবই উত্তম পন্থা।
৪. আল্লহর পথে অর্থ খরচ করা
শুধু ফরয যাকাতই নয় বরং সাধ্যানুসারে নফল দান ও সাদাকা করা দরকার। কী পরিমাণ দান করেছেন সেটা বিচার্য বিষয় নয়, আপনার সম্পদের কত অংশ দান করেছেন সেটাই মূল বিচার্য। কখনো কখনো গরিবের একশত টাকা ধনীর একহাজার টাকার চেয়েও উত্তম হতে পারে।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে বেশি বেশি ভালো কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমরা যেন সর্বাবস্থায় সৎচিন্তায় জীবন-যাপন করতে পারি। আমিন।