লাখোকণ্ঠ ধর্ম ডেস্ক: রমজানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হল রোজা। রোজাকে আরবি ভাষায় সিরাম বলা হয়। যার অর্থ হলো কোনো কিছু থেকে বিরত থাকা। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই মাস। জানেন কি, প্রাচীন গ্রীকরা শরীরকে সুস্থ রাখেতে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের বেলায় কম খাদ্য গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন- উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগ ও স্থূলতা প্রতিরোধ করে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতি ঘটায়।
জাপানি নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী উসেনরি ওসমি। তিনি গবেষণায় আবিষ্কার করেন যে, ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা রোজা রাখলে মানুষের দেহে অটোফেজি (Auto phazy) চালু হয়। Auto phazy শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ। Auto অর্থ নিজে নিজে এবং phazy অর্থ খাওয়া। অর্থাৎ নিজে নিজেকে খাওয়া। শরীরের কোষগুলো বাইরে থেকে খাবার না পেয়ে যখন নিজের অসুস্থ্য কোষগুলো খেতে শুরু করে তখন মেডিকেল সাইন্স এর ভাষায় তাকে autophazy বলা হয়। শুধুমাত্র এটা আবিষ্কার করে উসেনোরি ওসোমি ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি প্রমাণ করেন যে, রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ নিন্মুক্ত উপকারগুলো পান:
▪︎১. দেহের সেল পরিস্কার হয়।
▪︎২. ক্যান্সার সেল ধ্বংস হয়।
▪︎৩. পাকস্থলীর প্রদাহ সেরে যায়।
▪︎৪.ব্রেইনের কার্যকারিতা বাড়ে।
▪︎৫. শরীর নিজে নিজেই সেরে যায় ( Autophazy)।
▪︎৬. ডাইয়াবেটিস ভালো হয়।
▪︎৭. বাধ্যর্ক রোধ করা যায়।
▪︎৮. স্থুলতা দূর হয়।
▪︎৯. দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়।
▪︎১০. মানুষ ও জীবের প্রতি সহানুভূতি জন্মায়।
রোজায় শারীরিক যে উপকারগুলো হয়-
১.রমজানে বেশিরভাগ মানুষই ইফতারে খেজুর খান। এর মাধ্যমে শরীরে মেলে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা। অতিরিক্ত বোনাস নিয়ে আসে। একটি খেজুরে ৩১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। এমনকি এতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে। খেজুরে উচ্চ মাত্রায় পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি থাকে। খেজুরকে সুপারফুডও বলা হয়।
২.এই মাসে খাওয়া-দাওয়া, পানি পান করার সময় পুরোপুরিভাবে বদলে যাওয়ার জন্য শরীর অন্য পর্যায়ে চালিত হয়। এসব কারণে রোজার সময় শরীরে বিভিন্নরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন – গ্যাস্ট্রিক, পানিশূন্যতা, শারীরিক অস্বস্তি ইত্যাদি। কিন্তু রোজার রাখলে শরীরে অনেক উপকারিতাও আছে।
৩. ওজন কমাতে সাহায্য করে বাড়তি ওজন যাদের, তারা এইসময়ে বিশেষভাবে উপকৃত হয়। যেহেতু এইসময় মানুষ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে, সকাল এবং সন্ধ্যেয় স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করে, যেমন- স্যুপ, রুটি, খেজুর এবং অন্যান্য ফল, যা দ্রুত ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার এড়ানো হয় বদলে তাজা ফল, তাজা শাকসবজি এবং পানি গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ওজন হ্রাস হয়।
৪. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে রমজানে রোজা রাখার অন্যতম সুবিধা হলো এটি আপনার রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। গ্লুকোজকে ভেঙে দেয় যাতে শরীর শক্তি পেতে পারে যা ইনসুলিনের উৎপাদন হ্রাস করে।
৫. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে রোজা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। দেহ খাদ্য এবং পানি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পরেও শরীরে সঞ্চিত ফ্যাট শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রোজার সময় বিপাকের হারও হ্রাস পায়। অ্যাড্রিনালিন এবং ননঅ্যাড্রিনালিন হরমোনগুলোর ক্ষরণও হ্রাস পায়, এটি বিপাকের হারকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।