Ad: ০১৭১১৯৫২৫২২
১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন আদালত
  3. আইন শৃংখলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি অর্থনীতি
  6. খেলাধূলা
  7. চাকরি-বাকরি
  8. জাতীয়
  9. জীবনের গল্প
  10. ধর্ম
  11. নির্বাচনী হাওয়া
  12. ফিচার
  13. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  14. বিনোদন
  15. রাজধানী
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আত্মীয়তা ও সম্পর্ক উন্নয়নে মাহে রমযানের ভূমিকা

বার্তা কক্ষ
মার্চ ২৮, ২০২৩ ১:০৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ধর্ম ডেস্ক : দিনবদলের পালাক্রমে রমযান আসে মু’মিন জীবনের আখেরাতের পাথেয় সঞ্জয়ের সুযোগ হিসেবে। সেই অনুযায়ী রোজাদার দিনলিপি সাজান।।ব্যক্তিগত, সামাজিক ইবাদতসমূহ পালনের মধ্য দিয়ে রমযান মাস অতিবাহিত করেন। রমযান ব্যক্তিগত আত্মীক উন্নয়নের মাস যেমন তেমনই সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাসও বটে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাহরী, ইফতার, ইবাদত -বন্দেগীর পাশাপাশি আত্মীয় স্বজন,পাড়া-পড়শি, বন্ধু -বান্ধবদের সাথেও রমযানের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের মধ্যে দিয়ে এক অপূর্ব রুহানি পরিবেশ তৈরি হয়।ফলে আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাকের সন্তষ্টি অর্জন করা যায়।

আত্মীয়তা

আত্মার সাথে যাদের সম্পর্ক তাদেরকে সাধারণ ভাবে আত্মীয় বলা হয়।এসম্পর্ক রক্ত ও বংশ যার একই শরীরে বহমান তিনিই রক্ত সম্পর্কের আপনজন।আত্মীয় – (১) রক্ত সম্পর্কীয় বা বংশীয়। যেমন পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, ভাইবোন, চাচা-চাচী, মামা-খালা ইত্যাদি। (২) কুটুম্বিতার কারণে অর্থাৎ বিবাহ সম্পর্কীয়। যেমন শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, শ্যালক-শ্যালিকা ইত্যাদি।
আত্মীয়’ শব্দের অর্থ হচ্ছে স্বজন, জ্ঞাতি, কুটুম্ব। এর আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে الرَّحِمُ (আর-রাহিমু) বা ذُو الرَّحِمِ (যুর রাহিমে)। رحمশব্দটি আরবী ভাষায় রুপক অর্থে নৈকট্য ও আত্মীয়তা বুঝতে ব্যবহার করা হয়।
আত্মীয়তা-এর ইংরেজী প্রতিশব্দ হচ্ছে Relationship. এর সংজ্ঞায় Oxford অভিধানে বলা হয়েছে The way in which two people, groups or countries behave towards each othe or deal with each other. অর্থাৎ এমন পথ-পন্থা যাতে দু’ব্যক্তি, দল বা দেশ পরস্পরের সাথে সদাচরণ করে বা পরস্পরে আলোচনা করে।’
সাধারণভাবে সবার সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা ওয়াজিব এবং সম্পর্ক ছিন্ন করা সকলের ঐক্যমতে হারাম। তবে কারো কারো নিকটে কবীরা গোনাহ।

মানবীয় দৃষ্টিতে আত্মীয়তা

পৃথিবীতে আদম আঃ.ও বিবি হাওয়া আ.এর আগমন থেকেই এ বন্ধনের সূচনা। সন্তান-সন্তুতি জন্মের মধ্যে দিয়ে আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় হয়েছে। ধীরে ধীরে এসম্পর্কের ভিত্তির ওপর সভ্যতার ভিত্তি গড়ে ওঠেছে।যে সমাজ যতটা মানবীয় হয়েছে সে সমাজ ততটাই নৈতিক ভিত্তির
ওপর গড়ে ওঠছে।প্রেম-প্রীতি,মায়া-মমতা,
স্নেহ-ভালোবাসা, আদর-যত্ন, বড়দের সন্মান,ছোটদের প্রতি যত্নশীল,সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, ধৈর্য,ত্যাগ,রাগ-অনুরাগ,মান-অভিমান এসব বৈশিষ্ট্য ধারণ করেই আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।শত বাধা মাড়িয়ে এসম্পর্কের মূল একক পরিবার প্রথা আজও টিকে আছে।তবে বিভিন্ন কারণে বর্তমানে এসম্পর্ক গুলোতে চির ধরতে আরম্ভ করেছে যা উত্তর আধুনিকতার ফল।

ইসলামী দৃষ্টিকোণে আত্মীয়তা

আল্লাহ বলেনঃ”তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সম্পর্কে সতর্ক হও।”(সূরা আন নিসা:১) অর্থাৎ রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। এ সম্পর্ক ছিন্ন করা জাহান্নামের যাওযার অন্যতম কারণ।আল্লাহ বলেন:” পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি এবং রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তাগুলোকে ছিন্ন করতে চাও নাকি?এসব অপকর্ম যারা করে তাদেরকে বধির ও অন্ধ করে দিয়েছেন।”(সূরা মুহাম্মদ: ২২-২৩)
**হযরত যুবাইর বিন মুতইম রা.থেকে বর্ণিত, রাসূল সা.বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।(বুখারী:৬৬৮৫, মুসলিম:৪৬৩৭)
**হযরত আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত, রাসূল সা.বলেছেন”আদম সন্তানের আমল (সপ্তাহের)প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত জুমার রাতে আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। কিন্তু আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর কোন আমল কবুল করা হয়না।”(আহমাদঃ২/৪৮৪)
**হযরত আবু হুরাইরা (রা) একবার এক বৈঠকে রাসূল (সা) এর হাদীস বর্ণনা করার সময় বললেন : কোন রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্নকারীর সাথে একত্রে বসতে আমি বিরক্ত বোধ করি, যতক্ষণ সে উঠে না যায় ।” এ কথা শুনে বৈঠকের শেষ প্রান্ত থেকে এক যুবক উঠে গেল। সে তার ফুফুর কাছে গেল। এই ফুফুর সাথে সে বহু বছর যাবত সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। পরে আবার সম্পর্ক বহাল করে । তার ফুফু জিজ্ঞাসা করলো : তুমি কেন এসেছ? সে বললো : আমি রাসূল (সা) এর সহচর আবু হুরাইরার কাছে বসেছিলাম। তিনি বললেন : রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে বসতে আমি বিরক্ত বোধ করি, যতক্ষণ না সে উঠে যায়।” তার ফুফু বললো : ওহে ভাতিজা, তুমি আবু হুরাইরার কাছে ফিরে যাও এবং তাকে জিজ্ঞাসা কর যে, এর কারণ কি? সে আবু হুরাইরার কাছে ফিরে গিয়ে তার ফুফুর বক্তব্য তাকে জানালো এবং জিজ্ঞাসা করলো আপনার কাছে কোন আত্মীয়তা ছিন্নকারী বসতে পারেনা কেন? হযরত আবু হুরাইরা বললেন : “আমি রাসূলকে (সা) বলতে শুনেছি যে, কোন দলের ভেতর রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারী কোন ব্যক্তি থাকলে তাদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়না।” (তারগীর ও তারহীব)
**ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মীয়তার বিষয়ে এত বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে যে,এ সম্পর্ক ছিন্নকারী আল্লাহ অভিসম্পাতপ্রাপ্ত হবে।(সূরা রা’দ:২৫),নেক আমল কবুল হবে না,জান্নাতে প্রবেশ করবে না,দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি পাবে এমনকি আল্লাহ পাকও সম্পর্কের ছিন্ন করবেন।

আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নয়ন

বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে,ভাই-বোন এবং এসবের উধ্বর্তন ও নিম্নতম আত্মীয়ের উপকার যতটুকু সামর্থ্য ব্যক্তির আছে,তা করতে দ্বিধা না করাই হলো আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষা বা উন্নয়ন ।
وَءَاتِ ذَا ٱلْقُرْبَىٰ حَقَّهُۥ وَٱلْمِسْكِينَ وَٱبْنَ ٱلسَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا
“আত্মীয়কে তার অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও তাদের অধিকার দাও।”(সূরা: বনী ইসরাঈল, আয়াত: ২৬)এই আয়াতের ইসলামের আপার সৌন্দর্য আত্মীয়তার বন্ধন ফুটে উঠেছে তাদের হক্ক আদায়ের তাগিদের মধ্যে দিয়ে।
***আনাস বিন মালেক রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা.বলেছেন, নিশ্চয় আত্মীয়তার সম্পর্ক আরশকে আঁকড়ে ধরা একটি কান্ড,যা জিহ্বার আগা দিয়ে বলে,”হে আল্লাহ তুমি তার সাথে জুড়ো যে আমার সাথে জুড়ে আর তুমি তাকে ছিন্ন করো যে আমাকে ছিন্ন করে।”তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতা’আলা বলেন, রাহীম রহমান (আমি দয়ালু,পরম করুণাময়)আর রাহীম(الرحم)তথা আত্মীয়তার সম্পর্ক শব্দটি আমার নাম থেকে বের করেছি। সুতরাং যে এর সাথে সুসম্পর্ক রাখবে আমি তার সাথে সুসম্পর্ক রাখবো।যে এসম্পর্ক ভঙ্গ করবে আমি তার সাথে সম্পর্ক ভঙ্গ করবো।(ইবনে অব্দির রাজ্জাক,মুসান্নফ-২৫৯০১)
**সুনানে আবু দাউদ:১৬৯৪নং হাদীসে হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ অনুরুপ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
**একদিন এক ব্যক্তি আল্লাহর নবী সা.কে বললেন,আমাকে এমন আমল শিক্ষা দিন,যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে,কোন কিছুকে তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাবে না, নামায কায়েম করবে
যাকাত আদায় করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে।(বুখারী,১৩৯৬)
**মতবিরোধ সত্তেও ইসলামী বিধানে আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নয়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একজন মুমিনের উচিত সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের মেলবন্ধনে জড়িয়ে থাকা।এ সম্পর্কের উন্নয়ন রমযান মাস থেকেই শুরু হতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং যারা আল্লাহ্ যা সংযুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা সংযুক্ত রাখে (আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে), নিজেদের প্রভুকে ভয় করে ও কঠিন হিসাবের আশংকায় থাকে। ’ (সুরা আর-রাদ, আয়াত: ২১)
**নবী (সা.) বলেন, ‘সম্পর্ক রক্ষাকারী সে ব্যক্তি নয়—অন্যে সম্পর্ক রক্ষা করলে যে সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং ওই ব্যক্তি হলো সম্পর্ক রক্ষাকারী যার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলেও সে সম্পর্ক রক্ষা করে। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৫৯৯১)

সম্পর্ক উন্নয়নে: রমযান

উত্তর আধুনিকতার যুগে মানুষ এখন এক অসহিষ্ণু জীবন যাপন করছে। পরিবার প্রথা অনেকটা শীথিল হতে চলছে। চারদেয়ালের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যক্তির একমাত্র সঙ্গী।ধনী থেকে গরীব,বৃদ্ধ থেকে কিশোর,নারী থেকে শিশু সকলেরই মধ্যে এই অস্হিরতা। মানবীয় মূল্যবোধ
নষ্ট হতে চলছে।ফলে বাড়ছে বৃদ্ধ পিতা মাতার প্রতি অবহেলা, শিশুদের প্রতি নির্দয় আচরণ। এমনকি কোথাও পিতা মাতাকে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে, যা সভ্য সমাজে কামনা হতে পারে না।পরকালে বিশ্বাসী একজন মুসলমান কখনো আত্মীয়তার বিষয়ে উদাসীন থাকতে পারে না। কেননা কেয়ামতের দিন তাকে কঠিন জবাবদিহির সম্মুখিন হতে হবে।তাই অতীত ভুলের ক্ষমা চেয়ে রমযান মাসে সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারেঃ
১.আত্মীয়দের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও খোঁজ খবর নেয়া–
পিতা মাতা,ভাই-বোন,মামা চাচাসহ আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করা।বিপদে, সুখে, অসুস্থ হলে, প্রয়োজনে সকল অবস্থায় পাশে থাকা। কেননা রাসূল সা.বলেছেনঃ”নিকট আত্মীয়দের সাথে সালাম দেওয়ার মাধ্যমে হলেও আত্মীয়তা ঘনিষ্ঠ কর।”
২.অভাব গ্রস্হ আত্মীয়দের অভাব দূর করার প্রচেষ্টাঃ
তারাবানীতে বিশ্বস্ত সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আছে যে, রাসূল সা.বলেছেন,’দরিদ্র ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন থাকতে যে ব্যক্তি তাদের প্রতি বদান্যতা প্রদর্শন করেনা এবং নিজেদের দান সদকা তাদেরকে না দিয়ে অন্যদেরকে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার সাদকা কবুল করেননা এবং কেয়ামতের দিন তার দিকে তাকাবেন না”
**আল্লাহ বলেনঃ
الۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ
وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ ۚ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ (۹۰
নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।(সূরা নাহলে:৯০)
**তাই উচিৎ ধনী দারিদ্র উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা চালান।

৩.সাধ্যমত মেহমানদারি করা।

যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন সিয়াম পালনকারী কে ইফতার করাবে, সে (সিয়াম পালনকারীর) সমান নেকীর অধিকারী হবে। আর তাতে সিয়াম পালনকারীর নেকীর কিছুই কমবে না।”(তিরমিযী ৮০৭, নাসাঈর কুবরা ৩৩৩১-৩৩৩২, ইবনে মাজাহ ১৭৪৬, ইবনে হিব্বান ৩৪২৯, সহীহ তারগীব ১০৬৫)
**আত্মীয়দের সামর্থ্য অনুযায়ী রমযানে মেহমানদারি করার মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নয়ন হবে আবার ইফতার করানোর কারণে সওয়াবও পাওয়া যাবে। তাই যতদুর সম্ভব প্রচেষ্টা চালান।

৪.সকল আত্মীয়ের সাথে সু সম্পর্ক রাখাঃ

তাদের সাথে ভদ্র আচরণ, হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ না করা,দোয়া করা, নিমন্ত্রণ করলে সাড়া দেওয়া ইত্যাদিতে আত্মীয়দের সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপায়। তাদের হক আদায়ের মাধ্যমে রিযিক ও হায়াত বাড়ে। আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমি রাসুলুল্লাহকে সা: বলতে শুনেছি তিনি বলেন,“যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিযিক প্রশস্ত করে দেয়া হোক এবং তাঁর আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে(বুখারী: ৫৯৮৫, মুসলিম: ৪৬৩৯)

৫.পরিরার ও আত্মীয় স্বজনদের রমযানে ইবাদতে কাটানোঃ
**আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রমযান মাসের সওম পালন করতাম। তিনি এ মাসে (প্রথম দিকের অধিকাংশ দিনই) আমাদেরকে নিয়ে (তারাবীহ) সলাত আদায় করেননি। অতঃপর রমযানের সাত দিন বাকী থাকতে তিনি আমদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করলেন রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। তিনি পরবর্তী রাতে আমাদেরকে নিয়ে (মাসজিদে) সলাত আদায় করলেন না। অতঃপর পঞ্চম রাতে তিনি আমাদেরকে নিয়ে সলাতে দাঁড়িয়ে অর্ধেক রাত অতিবাহিত করেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি আপনি এ পুরো রাতটি আমাদেরকে নিয়ে সলাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেনঃ কোন ব্যক্তি ইমামের সাথে (‘ঈশার) সলাত আদায় করে প্রত্যাবর্তন করলে তাকে পুরো রাতের সলাত আদায়কারী হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি বলেন, অতঃপর পরবর্তী চতুর্থ রাতে তিনি (মাসজিদে) সলাত আদায় করেননি। যখন তৃতীয় রাত এলো তিনি তার পরিবার-পরিজন, স্ত্রী ও অন্য লোকদের একত্র করলেন এবং আমাদেরকে নিয়ে এত এতদীর্ঘক্ষণ সলাত আদায় করলেন যে, আমরা ‘ফালাহ’ ছুটে যাওয়ার আশংকা করলাম। জুবাইর ইবনু নুফাইর বলেন, আমি জিজ্ঞসা করলাম, ‘ফালাহ’ কি? তিনি বললেন, সাহারী খাওয়া। অতঃপর তিনি এ মাসের অবশিষ্ট রাতে আমাদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করতে দাঁড়াননি।(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৩৭৫)
**আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরমাযানের শেষ দশক এলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সারা রাতই জাগ্রত থাকতেন, (‘ইবাদতের উদ্দেশে) শক্তভাবে কোমড় বাঁধতেন এবং পরিবারের লোকদের জাগাতেন।
(সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৩৭৬)

৬.সদাচরণ
রামাযানে রোজাদারের মন নরম হয়। দয়া ও ভালােবাসার উদ্রেক হয়। তার এই দয়া ও ভালােবাসার পাওয়ার সবচেয়ে বড় হকদার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন। রামাদান একজন মুসলিমকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সে একা নয়; তার অনেক আত্মীয়-স্বজন আছে। কাজেই তার উচিত তাদের প্রতি সদাচারণ করা।
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত—
‘জনৈক সাহাবী বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখি; কিন্তু তারা সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের প্রতি সদাচার করি; কিন্তু তারা আমার প্রতি দুব্যবহার করে। তার কথা শুনে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, যা বললে, যদি সত্যি সত্যি তাই হয়ে থাকে, তবে তুমি যেন তাদের মুখে উত্তপ্ত বালু ঢালছ। আর জেনে রেখাে, তােমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক একজন সাহায্যকারী নিযুক্ত থাকবে।‘(সহীহ মুসলিম : ২৫৫৮)
**আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর অধিকাংশ আত্মীয়ই ছিল তার জানের দুশমন। তারা তাকে কষ্ট দিয়েছে, যুদ্ধ করেছে। জন্মভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে। এতকিছুর পরও আল্লাহ যখন তাকে দুশমনদের ওপর বিজয় দান করলেন তখন রাসূল সা.সব কিছু ভুলে তাদের ক্ষমা করে দেন ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত বিরল।
**পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মা-বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক। সন্তানকে যে-কোনাে মূল্যে এই সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। মা-বাবার সাথে সদাচারণ করতে হবে। তাদের প্রতি কোমল ও বিনম্র হতে হবে। তাদের সম্মান দিতে হবে এবং তাদের জন্য দয়া ও করুণার দুআ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَقَضى رَبُّكَ أَلّا تَعبُدوا إِلّا إِيّاهُ وَبِالوالِدَينِ إِحسانًا إِمّا يَبلُغَنّ عِندَكَ الكِبَرَ أَحَدُهُما أَو كِلاهُما فَلا تَقُل لَهُما أُفٍّ وَلا تَنهَرهُما وَقُل لَهُما قَولًا كَريم:
“আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের
সাথে সম্মানজনক কথা বল।”বনী-ইসরাঈল১৭:২৩)
**হাদীস শরীফে এসেছে—আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
জনৈক ব্যক্তি নবী -এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার সদাচারণ পাওয়ার সর্বাধিক হকদার কে? তিনি বললেন, তােমার মা। লােকটি আবার জিজ্ঞেস করল, তার পরে কে? তিনি বললেন, তােমার মা। লােকটি আবার জানতে চাইল, তার পরে কে? তিনি বললেন, তােমার মা। লােকটি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করল, তার পরে কে? তখন তিনি বললেন, তােমার বাবা।‘ (সহীহ বুখারী: ৫৯৭১; সহীহ মুসলিম : ২৫৪৮)
আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নয়নে রমযান মাস সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ও বড় মাধ্যম। কারণ, রামাদান উত্তম চরিত্রের উন্মেষ ঘটায়। দয়া-অনুগ্রহ ও প্রেম-ভালােবাসা সৃষ্টি করে, হৃদয় বিগলিত করে,অনুভূতি তীব্র করে ,মেজাজ শান্ত রাখে,, ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে ফলে অহংকার,হিংসা, বিদ্বেষ এ গুলো দূর হয়।কাজেই রামাদানে আত্মীয়-স্বজনদের খবর নিতে পারি। সাক্ষাৎ করতে পারি, দুআ করতে পারি এবং বিভিন্ন সময়ে উপহার-সামগ্রী দিয়ে সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করতে পারি।ঈদুল ফিতরের মধ্যে আত্মীয়তা সম্পর্ক আরও উন্নত করে পরবর্তী সময়ের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। আল্লাহর তৌফিক দান করুন আমীন।



এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।