Ad: ০১৭১১৯৫২৫২২
২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ || ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন আদালত
  3. আইন শৃংখলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি অর্থনীতি
  6. খেলাধূলা
  7. চাকরি-বাকরি
  8. জাতীয়
  9. জীবনের গল্প
  10. ধর্ম
  11. নির্বাচনী হাওয়া
  12. ফিচার
  13. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  14. বিনোদন
  15. রাজধানী
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে / সমুদ্র সম্পদের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

নিউজ রুম
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ ৯:০২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ড. সুব্রত সরকার
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এস ডি জি  হল একটি বৈশ্বিক আহ্বান যা বিশ্বব্যাপী দারিদ্রতার অবসান ঘটিয়ে সমৃদ্ধি অর্জন এবং একইসাথে পরিবেশের সংরক্ষন ও জলবায়ু রক্ষা নিয়ে কাজ করে। টেকসই উন্নয়নের অ্যাজেন্ডা ২০৩০ এর অংশ হিসাবে ২০১৫ সালে জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ ১৭ টি লক্ষমাত্রা নির্ধারন করে যা  এস ডি জি-এর লক্ষমাত্রা হিসাবে পরিচিত। আর এই ১৭টি লক্ষমাত্রা অর্জনে ২৩১ টি স্বতন্ত্র সূচক নির্ধারণের সাথে গ্রহণ করা হয় ১৫ বছরের কর্ম পরিকল্পনা।  সে হিসাবে ২০৩০ সাল নাগাদ সংশ্লিষ্ট দেশ সমূহের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কথা। জাতিসংঘের সদস্য হিসাবে বাংলাদেশও এস ডি জি এর লক্ষ্য সমূহকে অর্জনের জন্য বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের এস ডি জি এর লক্ষ্য অর্জনের উদ্যেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এস ডি জি ওয়ারকিং কমিটি ৩৯টি সূচক নির্ধারন করে। আর এই ৩৯টি সূচক অর্জনের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।

এস ডি জি এর ১৭ টি লক্ষ্যের মধ্যে ১৪ তম লক্ষটি হল টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, মহাসাগর এবং সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার। আর এই লক্ষমাত্রাটি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় ২০১২ সালে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধের নিস্পত্তি এবং পরবর্তীতে ২০১৪  সালে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধের নিস্পত্তির  মাধ্যমে বাংলাদেশ ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকার একচ্ছত্র আধিপত্য লাভ করে। এই বিশাল সমুদ্রসীমা বাংলাদেশের স্থল ভাগের আয়তনের প্রায় সমান। এই বিশাল সমুদ্রসীমার সম্পদকে সংরক্ষণ এবং টেকসইভাবে আহরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির এক নতুন দিগন্ত সূচনা করা সম্ভব।

জাতিসংঘ কতৃর্ক গৃহীত এস ডি জি এর  ১৪ তম লক্ষটি অর্জনের জন্য ১০ টি সূচক নির্ধারণ করা আছে। এই সূচকগুলো হল: ২০২৫ সালের মধ্যে সকল ধরনের সামুদ্রিক দূষণ হ্রাস; ২০২০ সালের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবেশের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষন করা; সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমে অ্যাসিডিফিকেশনের প্রভাব মোকাবেলা করা; ২০২০ সালের মধ্যে সামুদ্রিক মাছের অতিআহরণ, অবৈধআহরণ, গোপন আহরণ, অনিয়ন্ত্রিত ও সকল ধরনের ক্ষতিকর আহরণকে নিয়ন্ত্রনে আনা এবং বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে সম্পদের ব্যবস্থাপনা করা; ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সামুদ্রিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের ১০% এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসাবে ঘোষনা করা; ২০২০ সাল নাগাদ অতিআহরণে সহায়ক এমন সকল প্রকার মৎস্য ভর্তুকি নিষিদ্ধ করা; ২০৩০ সালের মধ্যে সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়ানো; সমুদ্র বিষয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক জ্ঞান বৃদ্ধি  করা; প্রান্তিক জেলেদের সামুদ্রিক সম্পদের উপর সুবিধা প্রদান; এবং আন্তর্জাতিক আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষন ও  টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা।

এস ডি জি ১৪ এর  জন্য বাংলাদেশ কতৃক নির্ধারিত সূচকটি হল সামুদ্রিক এলাকায় সংরক্ষিত এলাকার পরিমান ৫শতাংশে উন্নীত করা।  সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র রক্ষার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় সংরক্ষিত এলাকার পরিমান বাড়ানোর জন্য বর্তমান সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উদাহনস্বরূপ,  ২০০০ সালে বাংলাদেশের উপকুলীয় অঞ্চলের ৬৯৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মেরিন রিজার্ভ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার মেগাফনা সংরক্ষনের জন্য সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের  ১৬৩৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা, ২০১৯ সালে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ সহ অন্যান্য সামুদ্রিক জীববৈচিত্র সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা এবং ২০২২ সালে প্রবালদ্বীপের জীববৈচিত্র সংরক্ষনের জন্য সেইন্ট মার্টিন দ্বীপের পার্শবর্তী জলসীমার ১৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা  হিসাবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকার পরিমান ৭৩৬৭ বর্গ কিলোমিটার যা দেশের সামুদ্রিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রায় ৬.২০ শতাংশ। সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা ছাড়াও ঘোষণা করা হয়েছে মাছের অভয়ারণ্য যা মৎস সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি বিশেষ করে ইলিশ মাছের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালে আনক্লোস আইনটি অনুসমর্থন করে যা বাংলাদেশের সমুদ্র ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা এবং মৎস আহরণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তৈরী হয়েছে সামুদ্রিক মৎস আইন ২০২০। সম্প্রতি, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেইন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে, সরকার দ্বীপে নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যটকদের আগে থেকেই অনলাইন নিবন্ধন এবং একটি নির্দিষ্ট ভ্রমণ ফি বাধ্যতামূলক করার জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছে।

সুনীল অর্থনীতি এ উন্নয়ন এর জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে ২০১৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠা করেন “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি” । এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্র বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ার লক্ষ্যে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়েছে যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। সকল সরকারি ও বেসরকারি খাতের মেরিটাইম স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সুনীল অর্থনীতি কার্যক্রমের যথাযথ সমন্বয় নিশ্চিত করার জন্য একটি স্বাধীন ব্লুইকোনমি সেল গঠন করা হয়েছে। তদুপরি, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের একমাত্র সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ জরিপ এবং গবেষনা জাহাজ  ‘আর ভি মীন সন্ধানী’ যাত্রা শুরু করে এবং এই জাহাজটি এখন পর্যন্ত সফলতার সাথে বাংলদেশের সমুদ্রসীমায় মৎস সম্পদের জরিপের কাজ করে যাচ্ছে।

সীমিত সম্পদের সাথে বিশাল জনসংখ্যার সামঞ্জস্যতা আনয়নের প্রচেষ্টায় পুরো বিশ্বই এখন গতানুগতিক অর্থনীতির বিকল্প খোঁজার পথে। এক্ষেত্রে সমুদ্র সংলগ্ন দেশসমূহের জন্য অবারিত সুযোগ এনেছে সুনীল অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনোমির ধারণা। ব্লু ইকোনোমির সুফল পেতে হলে সমুদ্র সম্পদের ক্ষেত্রসমূহকে গবেষণা ভিত্তিক চিহ্নিত করা, সম্পদ আহরণের উপায়সমূহ বের করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এ সম্পদের সুষ্ঠ ও টেকসই ব্যবস্থাপনাও অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।  জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এর ১৪ তম লক্ষটি হলো সমুদ্র ও সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার। আর এই লক্ষ্য অর্জনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র সংরক্ষন সহ সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার করার নিমিত্তে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ প্রশংসার দাবিদার। আর এই অব্যাহত পদক্ষেপের মাধ্যেমে বাংলাদেশ খুব দ্রুতই সামুদ্রিক জীববৈচিত্র সংরক্ষনের জন্য রোল মডেলে পরিণত হবে যা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল ০১৭১০-৪১৭৭৫৩
ইমেইল subratasrk-ocg@sust.edu



এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।