Ad: ০১৭১১৯৫২৫২২
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন আদালত
  3. আইন শৃংখলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি অর্থনীতি
  6. খেলাধূলা
  7. চাকরি-বাকরি
  8. জাতীয়
  9. জীবনের গল্প
  10. ধর্ম
  11. নির্বাচনী হাওয়া
  12. ফিচার
  13. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  14. বিনোদন
  15. রাজধানী
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশ কি আমেরিকার উপরাষ্ট্র নাকি কলোনী? / আমেরিকার বার্তা কিন্ত পরিস্কার

নিউজ রুম
মে ২৫, ২০২৩ ১১:০১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

হাসান রহমান পলক ।। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিও বুশ ইরাক যুদ্ধের সময় বিশ্ববাসীকে একটি বার্তা পরিস্কার করে জানিয়ে দিয়েছেনযে,যারা আমেরিকার বন্ধু নয় তারা অবশ্যই আমেরিকার শত্রু।  সেই সময়টি ছিলো সমগ্র বিশ্বে আমেরিকার একক ও অদ্বিতীয় আধিপত্য। তাদের আধিপত্য এখনো আছে হয়তো আরো দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে। আমেরিকার বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলার মত সাহস এখনো খুব বেশী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নেই। তবে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে অত্যন্ত নমনীয় সুরে বিবিসির সাংবাদিক ইয়ালদা হাকিমকে জানিয়েছেন, আমেরিকা হয়তোবা বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখতে চায়না অথবা আমাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায়না। বিস্ময়কর বিষয় হল বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় থাকবে বা থাকবেনা এ বিষয়টি কি আমেরিকার নিয়ন্ত্রনাধীণ! বাংলাদেশ কি আমেরিকার উপরাষ্ট্র নাকি কলোনী? দল মত নির্বিশেষে, স্বাধীন বাংলাদেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বিষয়টি চিন্তা করে নিজেকে বড় অসহায় লাগে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুভ্রমানিয়াম জয়শংকর অবলিলায় প্রকাশ্যেই বলেছেন, “পশ্চিমারা মনে করে ইউরোপের সমস্যা মানে সমগ্র বিশ্বের সমস্যা। কিন্তু সমগ্র বিশ্বের সমস্যা ইউরোপের সমস্যা নয়। তাদের এই ধরণের মনস্তাত্মিক উপসংহার থেকে বেরুতে হবে”। জয়শংকরের এই ধরনের সাহসী উচ্চারণকে সমগ্র ভারতবসী সাধুবাদ জানায়। কারণ ভারতের অভ্যন্তরীন এবং পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দল মত নির্বিশেষে সবাই একাট্টা।

নেলসেন ম্যান্ডেলা আমেরিকান সাংবাদিকের মুখের উপর যখন বলে দিয়েছেন, “পশ্চিমারা মনে করে তাদের শত্রু মানে আমাদেরও শত্রু, তাদেরকে এই ধরণের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে”। নেলসেন ম্যান্ডেলার এই বক্তব্যকে বিশ্ববাসী শ্রদ্ধাভরে সমর্থন করে। কারন প্রতিটি দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা ভিন্ন। আমেরিকান স্বপ্ন অন্য কোন দেশের জন্য দুঃস্বপ্নও হতে পারে। যদিও আমেরিকার শাসক গোষ্ঠি এই বিষয়টি মানতে নারাজ। অসীম ক্ষমতা তাদেরকে দীর্ঘ সময় ধরে বিবেকহীন করে রেখেছে।

আমেরিকার সাথে চীনের শত্রুতা দীর্ঘদিনের। সেই শত্রুতা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির। তাদের এই বৈরী সম্পর্ককে মধুর সম্পর্কে পরিণত করার সামর্থ বাংলাদেশের নেই। তাই বলে কি বাংলাদেশকেও চায়নার সাথে শত্রুতার সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে? আমেরিকার এই ধরনের অন্যায় আবদার না মানলেই কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন বিষয়ে তাদেরকে সক্রিয় হতে হবে? বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার সাম্প্রতিক উৎসাহ দেশের জন্য কতটা কল্যাণকর তা যাচাই করে দেখাটা অত্যন্ত জরুরী। বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কি এ বিষটি পর্যবেক্ষন এবং প্রতিষ্ঠা করার জন্য যথেষ্ট নয়? ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিচার বহিভূর্ত হত্যা কান্ডের অভিযোগ আছে। অথচ প্রায় দুই দশকেও আমেরিকা এই বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিদের উপর তাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। চায়নার সাথে বাংলাদেশ সব ধরনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করলেই কি আমারিকার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ মানবাধিকারের চারণ ভুমিতে পরিণত হবে? নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগ নিস্পত্তি হয়ে যাবে?

বিশ্বব্যাপী আমেরিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বেশ অলৌকিক। তাদের আস্কারা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় সাদ্দাম হোসেনের উত্থান। ইরানকে শায়েস্তা করার জন্য সাদ্দাম হোসেনের সকল দুঃশাসন তারা কয়েক দশক ধরে চোখ বুঁজে সহ্য করেছে। অথচ সেই ইরাকেই আবার গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাদ্দাম হোসেনসহ দেড় মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছে। ইরাকের সেই সকল হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলার মত সাহসী মানুষ খুব বেশী নেই। পৃথিবী দেখেছে আমেরিকার গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিষ্ঠুর অগ্রযাত্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইয়েমেন।

আমেরিকার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কৌশলটিও বেশ চমকপ্রদ। ম্যাক্সিকান বর্ডারে অসহায় মানুষের ঢল দেখছি প্রতিদিন। ধুকে ধুকে মারা যাচ্ছেন সর্বশান্ত অভিবাসন প্রত্যাশিরা। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এইসকল অভিবাসীরা জানেন একবার আমেরিকায় প্রবেশ করতে পারলেই নিরাপদ। কারণ আমেরিকার বাইরে থাকা মানেই নিরাপত্তাহীনতা। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে আমেরিকার এমন কি দায় পড়েছে সমগ্র বিশ্বের অসহায় মানুষকে তার দেশে আশ্রয় দিবে? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আমেরিকান বুদ্ধিজীবি নওম চমস্কি, তিনি বলেছেন “আমেরিকার আগ্রাসনে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বহু দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এই সকল দেশের অসহায় মানুষ এখন প্রাণে বাঁচতে আমেরিকায় আশ্রয় নিতে চায়”। ফিলিস্তিনের মানুষদের মানবাধিকার নিয়ে আমেরিকার পরিস্কার বক্তব্য শুনতে চায় বিশ্ববাসী। ইয়েমেনের মানুষ জানতে চায় তাদের কি অপরাধ?

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আমেরিকার ঐতিহাসিক অবস্থান কেউ ভুলে যায়নি। নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের অবস্থান ছিলো শতভাগ অগণতান্ত্রীক। তখন আমেরিকার কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি ভিন্ন রকমের ছিলো? তিরিশ লক্ষ শহীদ আর তিন লক্ষ নিপিড়িত নারীর সম্ভ্রম কেন আমেরিকার দৃষ্টিতে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ছিলো না? কি করে তারা পাকিস্তানের নিপিড়কদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো? ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী গনহত্যার জন্য যেমন পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ ঠিক একই ভাবে এই নিষ্ঠুরতাকে সমর্থন দেয়ার অপরাধে আমেরিকাকেও বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন বিষয় নিয়ে আমেরিকা যে ধরণের দাদাগিরি করে, তাদের অভ্যন্তরিন বিষয় নিয়ে কেউ এর সামান্যতম কথা বললে তারা কি সেটা মেনে নেবে? যে আমেরিকা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। সেই আমেরিকা কি পারবে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ ও শিশু হত্যাকরী ইসরাইলী জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে? ইরাক এবং আফগানিস্তানে নরহত্যার যে উৎসব করেছে আমেরিকার সৈন্যরা সেই অপরাধে তাদের কি ধরনের সাজা হয়েছে? গুয়েন্তানামো বের অন্ধকার সেলে নির্যাতন করতে করতে বিনা বিচারে হত্যা করা নিরাপরাধ মানুষদের বিচার কি পাবেনা তাদের পরিবার? সমগ্র বিশ্বের মানবাধিকার ধ্বংসে যে দেশটি একের পর এক যুদ্ধ লাগিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে কে এর হিসেব চাইবে?

এক মাত্র জামায়াত ইসলামী এবং তাদের কিছু সহযোগী সংগঠন ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে। সুতরাং দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন থাকলে ক্ষমতার পালা—বদল কেবল সময়ের দাবী। দেশের নিরাপত্তাবাহিনী যদি কোন ধরনের অনিয়মের সাথে জড়িয়ে যায় তবে সেই দায় সরকারেরও। আর এই সকল সমস্যা অভ্যন্তরিনভাবেই সমাধান করা সম্ভব। ক্ষমতার পালাবদল হবেই, এই পালাবদল কখনো স্বল্প মেয়দী আবার কখনো দীর্ঘ মেয়াদী। নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের আশায় না থেকে অন্তত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্তে হলেও দল মত নির্বিশেষে বহিঃশক্তির ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে রক্ষা করা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের এবং প্রতিটি মানুষের নাগরিক দ্বায়িত্ব। কারণ, আমরা লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জন করা স্বাধীনতা এবং এক স্বাধীন রাষ্ট্রের উত্তরাধিকার।

দেশ প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরাও দেশের নাগরীক, তারা দেশের সুশাসন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে নিয়োজিত। তারা যদি কোন অন্যায় করে থাকে তবে তাদেরকে দেশের অভ্যন্তরেই আইনের আওতায় আনা সম্ভব। তাদেরকে কারো প্রতিপক্ষ ভাববার কারণ নেই। ক্ষমতায় যেই থাকুক, যারা রাষ্ট্র এবং সরকার পরিচালনা করে এই সকল বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রতি অনুগত থাকবে, এইটাই একটি সুশৃংখল বাহিনী এবং কল্যান রাষ্ট্রের নিয়ম।

আমেরিকান মায়াজালে পা জড়ালে কি ধরনের করুণ পরিনতি ভোগ করতে হয় সেই অভিজ্ঞতা সাদ্দাম হোসেনের ছিল এবং ভলোদিমির জেলেনস্কির আছে। মোহাম্মদ বিন সালমান শিক্ষা নিয়েছেন। শিক্ষা নিয়েছেন ইমরান খানও। অতএব,সাধু সাবধান!



এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।